দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নিরঙ্কুশ জয়ের পর এবারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন মন্ত্রিসভার শপথ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী গাড়ি, বাড়ি, চিকিৎসা খরচসহ অন্তত ১৩ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীরা কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তা নির্ধারণ করা আছে ‘দ্য মিনিস্টার্স, মিনিস্টার্স অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টার্স (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অ্যাক্ট’-এ।
প্রধানমন্ত্রী ‘দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স (রেমুনারেশেন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন, ২০১৬’ এবং মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা ‘দ্য মিনিস্টারস, মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন, ২০১৬’ অনুযায়ী বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।
বেতন ও বাড়িভাড়া: একজন মন্ত্রীর মাসিক বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর বেতন ৯২ হাজার ও উপমন্ত্রীর ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। দায়িত্ব পাওয়ার পর একজন মন্ত্রী সরকারি ব্যয়ে একটি সুসজ্জিত বাসভবন পান বিনা ভাড়ায়। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী একই সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে মন্ত্রী যদি নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাহলে সরকার থেকে তিনি মাসিক ৮০ হাজার টাকা করে ভাড়া পাবেন। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী পাবেন ৭০ হাজার টাকা করে। এ ছাড়া নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে তিন মাসের বাড়ি ভাড়ার সমপরিমাণ টাকা পাবেন তারা।
এলাকার উন্নয়নে বরাদ্দ: নিজ এলাকার মসজিদ, মন্দির উন্নয়নসহ এলাকার মানুষের দাতব্য কাজে একজন মন্ত্রীকে বছরে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ খাতে প্রতিমন্ত্রী পাবেন সাড়ে ৭ লাখ ও উপমন্ত্রী পাবেন ৫ লাখ টাকা করে। এ টাকার মধ্যে মন্ত্রী চাইলে একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দিতে পারেন। প্রতিমন্ত্রী দিতে পারেন ৩৫ হাজার আর উপমন্ত্রী ২৫ হাজার টাকা।
আপ্যায়ন ভাতা: মন্ত্রী হওয়ার পর তার দপ্তরে দেশি-বিদেশি অনেকে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। নির্বাচনী এলাকার মানুষও দেখা করতে আসেন মন্ত্রীর সঙ্গে। তাদের আপ্যায়নের জন্য একজন মন্ত্রী মাসে ১০ হাজার টাকা, প্রতিমন্ত্রী সাড়ে ৭ হাজার টাকা আর উপমন্ত্রী ৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বছরে বিমা সুবিধা পাবেন ১০ লাখ টাকা।
চিকিৎসা খরচ: মন্ত্রিসভার সদস্যরা অসুস্থ হলে তার পুরো চিকিৎসা খরচ সরকার বহন করে। এ ক্ষেত্রে বলা আছে, চিকিৎসা খরচ সীমাহীন। তবে খরচের ভাউচার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিতে হবে।
গাড়ি সুবিধা: মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী সরকারি খরচে একটি করে গাড়ি সুবিধা পাবেন। সরকারি প্রয়োজনে বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকায় ভ্রমণের সময় তারা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেকোনো সংস্থা বা দপ্তর থেকে একটি জিপ গাড়ি পাবেন। জ্বালানি বাবদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দৈনিক ১৮ লিটার জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ অর্থ পাবেন।
একজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী দেশের ভেতরে কোথাও ভ্রমণে গেলে দৈনিক ভাতা পাবেন দুই হাজার টাকা করে। উপমন্ত্রী পাবেন দেড় হাজার টাকা করে।
বাড়ি সাজসজ্জায় টাকা: সরকারি বাড়ি সাজসজ্জা করতে একজন মন্ত্রী প্রতিবছর পাবেন পাঁচ লাখ টাকা। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা পাবেন চার লাখ টাকা করে। এ ছাড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বাসভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন ব্যয় যা আসবে, সরকার পুরোটাই বহন করবে।
মন্ত্রীর ১০ সহায়ক : মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী নিজের পছন্দ অনুযায়ী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব (পিএস) পাবেন। এ ছাড়া একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং সরকারি কর্মকর্তার বাইরে নিজের পছন্দের একজন সহকারী একান্ত সচিব পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া দুজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, একজন জমাদার, একজন আরদালি, দুজন অফিস সহায়ক ও একজন পাচক পেয়ে থাকেন। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী একজন একান্ত সচিব, একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন জমাদার, একজন আরদালি ও একজন অফিস সহায়ক পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা একটি করে মুঠোফোন পাবেন।
চিফ হুইপ ও বিরোধীদলীয় নেতা : চিফ হুইপ ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদটি একজন পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদার। তিনি একান্ত সচিব (পিএস), একজন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), দুজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, একজন বাহক, দুজন অফিস সহায়ক ও একজন পাচক পান। এ ছাড়া আটজন পুলিশ সদস্য, দুজন গানম্যান সুবিধা দেওয়া হয় তাকে। গাড়ির সুবিধাও পেয়ে থাকেন বিরোধীদলীয় নেতা। মন্ত্রীদের মতো বিরোধীদলীয় নেতা সরকারি বাসা পেয়ে থাকেন। সেই বাসার যাবতীয় খরচ সরকার থেকে। এ ছাড়া হুইপ একজন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়া নতুন সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ পাঠ করান।