অ্যালঝাইমার্স একটি প্রগতিশীল নিউরোডিজেনারেটিভ ব্যাধি। এটি মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতি করে এবং স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা ও আচরণগত সমস্যা তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের লক্ষণ বাড়তে থাকে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
সেজন্য অ্যালঝাইমার্স রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি কিছুটা হলেও ধীর করা সম্ভব।
আধুনিক গবেষণার তথ্য মতে, দিক ভুলে যাওয়া বা স্থানিক স্মৃতিভ্রংশ অ্যালঝাইমার্স রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক লক্ষণ। মস্তিষ্কের যে অংশগুলো দিক নির্দেশনা ও স্মৃতিশক্তির জন্য দায়ী (যেমন হিপ্পোক্যাম্পাস ও প্যারিটাল লোব), অ্যালঝাইমার্স রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সেগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। এর ফলে রোগীরা পরিচিত জায়গাতেও হারিয়ে যেতে পারেন বা রাস্তা চিনে কোথাও যেতে সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
মাঝেমধ্যে কোনো পরিচিত রাস্তা ভুলে যাওয়া বা কোথায় কোন জিনিস রেখেছেন তা মনে করতে না পারা স্বাভাবিক।
বিশেষ করে ক্লান্তি বা মানসিক চাপের সময় এমনটা হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি ঘন ঘন পরিচিত জায়গাতেও হারিয়ে যান, বাড়ির রাস্তা চিনতে অসুবিধা বোধ করেন, মানচিত্র বা দিকনির্দেশনা বুঝতে সমস্যায় পড়েন, অথবা স্থান সম্পর্কে বারবার বিভ্রান্ত হন, তাহলে তা অ্যালঝাইমার্সের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তবে এই লক্ষণটি ছাড়াও এই রোগের আরো বেশ কিছু উপসর্গ আছে-
স্মৃতিভ্রংশ : বিশেষ করে সাম্প্রতিক ঘটনা বা তথ্য ভুলে যাওয়া।
দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে অসুবিধা : পরিচিত কাজ, যেমন রান্না করা বা পোশাক পরায় সমস্যা হওয়া।
ভাষা ব্যবহারে সমস্যা : সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে বা বাক্য গঠন করতে অসুবিধা।
সময় ও স্থান সম্পর্কে বিভ্রান্তি : তারিখ, ঋতু বা পরিচিত স্থান ভুলে যাওয়া।
বিচার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বলতা : ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া বা অযৌক্তিক আচরণ করা।
মনোযোগ ও পরিকল্পনা করতে সমস্যা : কোনো কিছুতে মনোযোগ ধরে রাখতে বা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে অসুবিধা।
জিনিসপত্র ভুল জায়গায় রাখা : জিনিসপত্র অস্বাভাবিক জায়গায় রেখে ভুলে যাওয়া।
মেজাজ ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন : খিটখিটে মেজাজ, উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা অসামাজিক আচরণ দেখা দেওয়া।
এই সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও সহায়তার মাধ্যমে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং রোগের তীব্রতা কমানো সম্ভব।
আইএ