খতমে তারাবির সঠিক নিয়ম

খতমে তারাবির সঠিক নিয়ম

জহির উদ্দিন বাবর

রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল তারাবি। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তবে অন্য সুন্নতের চেয়ে এর গুরুত্ব বেশি। রমজানের পুরো বরকত লাভের জন্য তারাবি খুবই সহায়ক। এই নামাজ দুই দুই রাকাত করে পড়তে হয়। পুরো রমজানে তারাবিতে একবার কোরআন শরিফ খতম করা সুন্নত। বিনা কারণে তারাবির নামাজ ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। বিশেষ কোনও অপারগতা থাকলে তারাবি আট ও বারো রাকাত পড়ারও অনুমতি আছে। তবে তারাবি ২০ রাকাতই সুন্নত। মক্কা- মদিনাসহ ইসলামের স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা ২০ রাকাত তারাবির পক্ষে সুস্পষ্ট মত দিয়েছেন। সুতরাং তারাবির রাকাত সংখ্যা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা কাম্য নয়।

সুন্নত হিসেবে তারাবির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে তারাবি পড়তে না পারলে বা ইচ্ছাকৃত না পড়লে তার রোজা হবে না— এমন কথা আদৌ ঠিক নয়। রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে তারাবি পড়ে, তার আগের সব পাপ মাফ করে দেওয়া হয়।’ এজন্য সম্ভব হলে তারাবির জামাত ছাড়া উচিত নয়।

মুসলিম মনীষীরা বলেছেন, তারাবি খোদায়ি নৈকট্য অর্জনের এমন এক ইবাদত যার কোনও তুলনাই হয় না। এই ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ সহজেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়। কারণ ২০ রাকাত তারাবিতে সেজদার সংখ্যা ৪০টি। আর প্রতিটি সেজদাই আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনের শ্রেষ্ঠতম একটি স্তর। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ স্তর আর হতে পারে না। মানুষ যখন আল্লাহতায়ালার সামনে সেজদায় পড়ে যায়, নিজের মর্যাদাময় কপাল মাটিতে ঠুকে দেয়, মুখে তার জারি থাকে ‘আমার প্রভু শ্রেষ্ঠতম’; তখন এই অবস্থাটি আল্লাহর নৈকট্যের শ্রেষ্ঠতম স্তর হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া তারাবিতে অসংখ্যবার আল্লাহর গুণগান গাওয়া হয়।

তারাবির নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা অনেকে। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রমজানের রাতে তারাবির নামাজ আদায় করেন, তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করা হয়।’ (বুখারি)

অন্য হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে সওয়াব পাওয়ার আশায় রোজা রাখেন, তারাবির নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তার জীবনের আগের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি)

রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকেই তারাবির নামাজের প্রচলন চলে আসছে। তবে তখন তারাবি সম্মিলিতভাবে জামাতে আদায় করা হতো না। রাসুল (সা.) মাত্র তিন দিন অঘোষিতভাবে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেছিলেন। তার এ আমলের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের প্রচণ্ড ঝোঁক ও উৎসাহ দেখে রাসুল (সা.) আশঙ্কা করলেন, এটি উম্মতের ওপর ফরজ করে দেওয়া হতে পারে। উম্মতের কষ্টের কথা বিবেচনা করে তিনি জামাতে তারাবি আদায় করা বন্ধ করে দিলেন। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)- এর যুগে সর্বসম্মতিক্রমে তারাবি জামাতে ২০ রাকাত পড়া হয়। এরপর থেকে জামাতে ২০ রাকাত তারাবি আদায়ের বিধান চলে আসছে।

তারাবির মাধ্যমে রোজা পূর্ণতা পায়। তারাবির নামাজে কোরআন খতম করা অনেক পুণ্যের বিষয়। রমজানের সঙ্গে কোরআনের যে যোগসূত্র রয়েছে, তা খতমে কোরআনের দ্বারা ফুটে উঠে। আমাদের দেশে এখন বেশিরভাগ মসজিদে খতমে তারাবি হয়। তবে তারাবিতে যথাযথ হক আদায় করে কোরআন পাঠ করা হয় খুব কম জায়গায়। খতমে তারাবি দ্রুত শেষ করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। অথচ ‘তারাবি’ শব্দের অর্থ হচ্ছে আরাম। যেহেতু এই নামাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু সময় বসে আরাম করা হয়, এ জন্য এই নামাজের নাম হয়েছে তারাবি। কিন্তু আরামের এই নামাজে আজকাল আরাম নেই বললেই চলে।

খতমে তারাবি অবশ্যই সওয়াবের। তবে কোরআন পাঠের যে বিধান আছে সে অনুযায়ী পাঠ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা আছে। যাদের হাতে সময় কম অথবা খতমে তারাবি পড়ার মতো ধৈর্য নেই, তারা প্রয়োজনে সুরাহ তারাবি পড়ে নেবেন। যারা অধিক পরিমাণে সওয়াব অর্জন করতে চান, শুধু তাদের জন্যই খতমে তারাবি। তাড়াহুড়ো, অশুদ্ধ পাঠ ও ভক্তি- শ্রদ্ধার অভাব থাকলে খতমে তারাবি না পড়াই উত্তম।

সারাবাংলা/এজেডএস

Scroll to Top