সোমালি জলদস্যুরা কতটা ভয়ঙ্কর, থামাতে না পারার কারণ | চ্যানেল আই অনলাইন

সোমালি জলদস্যুরা কতটা ভয়ঙ্কর, থামাতে না পারার কারণ | চ্যানেল আই অনলাইন

প্রায় ছয় বছর পর আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এর আগেও অঞ্চলটিতে একের পর এক জাহাজে হামলা করে নাবিকদের জিম্মি ও মুক্তিপণ আদায়ের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একজোট হয়ে জলদস্যু-বিরোধী অভিযান চালিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ। তবে দীর্ঘদিন পর আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা।

রোববার ১৭ মার্চ বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের একজোট অভিযানের পর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায় জলদস্যুদের আক্রমণ। কিন্তু গত কয়েক মাসে অন্তত ১৪টি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনায় ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’ অঞ্চলের সমুদ্র-নিরাপত্তা নিয়ে আবারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, কেন কোনভাবেই সোমালিয়ার জলদস্যুদের থামানো যাচ্ছে না?  আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে চলছে আলোচনা।

‘হর্ন অফ আফ্রিকা’
পূর্ব আফ্রিকার একটি অংশের নাম ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’। ত্রিকোণাকৃতির ভৌগোলিক মানচিত্রের কারণেই অঞ্চলটিকে এই নামে ডাকা হয়। একে ‘সোমালি উপদ্বীপ’ও বলা হয়। সমুদ্রপথে বৈশ্বিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা এটি।

আর ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’র বড় একটি অংশজুড়েই আছে সোমালিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে চলা দেশটির যুদ্ধবিগ্রহ এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা ও সমুদ্র উপকূল রক্ষায় প্রশাসনের শক্তিশালী উপস্থিতি না থাকায় অঞ্চলটিতে নাশকতা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে জলসীমার নিরাপত্তায় সরকারি বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে সেখানে বাড়ে বিদেশি মাছ ধরা নৌযানের উপস্থিতি। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ে স্থানীয় জেলেরা।

আর সোমালিয়ার সমুদ্র এলাকায় বিদেশিদের এই শোষণ বন্ধে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে ওই অঞ্চলে বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধের চেষ্টা করে। কিন্তু বিদেশি জাহাজ জিম্মি করে পাওয়া মুক্তিপণের অর্থ পেয়ে দস্যুবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে অনেক সোমালিয়ান তরুণ।

যেসব কারণে অপ্রতিরোধ্য সোমালি জলদস্যুরা

এই অঞ্চলে সমুদ্রের আড়াই মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা ছিনতাইপ্রবণ। সাধারণত ছোট স্পিডবোটে করে এসে দড়ি আর মই দিয়ে জাহাজে উঠে জাহাজের নাবিকদের জিম্মি করে ফেলে সোমালি জলদস্যুরা।

আর কোন উপকূলরক্ষী বা পুলিশের শক্তিশালী উপস্থিতি না থাকায় প্রায় বিনা বাঁধায় সশস্ত্র এই জলদস্যুরা জিম্মি করা জাহাজ সোমালিয়া উপকূলে নোঙর করতে পারে।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম এনবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকার দেন গিলস মেরিট। সেসময় তিনি ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সিকিউরিটি এন্ড ডিফেন্স এজেন্ডার পরিচালক ছিলেন। গিলস বলেন, ‘এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগে যে আমরা এমন এয়ারক্রাফট চালাতে পারি যা চলমান যেকোন কিছু চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু স্পষ্টতই আমরা ছোট নৌকার মধ্যে মেশিনগান হাতে কিছু তরুণকে দেখতে পাই না।’

ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বলছে, তাদের রাডারে জলদস্যুদের টহল ধরা পড়ে এবং তারা জাহাজের নাবিকদের সতর্কও করে। কিন্তু ভারত সাগর থেকে এডেন উপদ্বীপ অঞ্চলটি বিশাল। ফলে যুদ্ধজাহাজ প্রত্যেক নৌযানকে সুরক্ষা দিতে পারে না, আবার সবসময় ঘটনার পর সেখানে সাথে সাথে উপস্থিতও হওয়া সম্ভব হয় না।

আবার জলদস্যুদের কোন স্পিডবোট দেখা কিংবা এর অবস্থান শনাক্ত করাই যথেষ্ট নয়।

সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, সমুদ্রের আড়াই মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা ছিনতাইপ্রবণ, যা পুরোপুরিভাবে টহল দেওয়া কার্যত অসম্ভব। এছাড়াও জলদস্যুরা বড় আকারের ‘মাদার শিপ’ ব্যবহার করে। এটি ব্যবহার করেই তারা সমুদ্রের মাঝখানে ছোট নৌযান থেকে আক্রমণ চালায়।

সমস্যা হলো এই বড় জাহাজগুলোও মূলত ছিনতাই করা। ফলে এগুলো দেখতে অন্য যেকোন মাছ ধরার নৌকার মতো। যার কারণে সমুদ্রে চলাচল করা এমন হাজার হাজার নৌকার মধ্যে থেকে দুর্বৃত্তদের জাহাজ খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব।

এছাড়া জাহাজের নিয়ন্ত্রণ জলদস্যুদের হাতে চলে গেলে যেকোন পদক্ষেপ নেয়াও কঠিন হয়ে যায়। কেননা জিম্মি নাবিকদের প্রাণ তাতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। আর এই জলদস্যুরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের সঙ্গে থাকে ভারি অস্ত্র আর গ্রেনেড।

জলদস্যুতা এবং সশস্ত্র ডাকাতি নিয়ে আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) বার্ষিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে ১২০টি জলদস্যুতা এবং সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।  ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১৫।

Scroll to Top