যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য খাবার বোঝাই একটি কার্গো নৌকা সাইপ্রাস থেকে যাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। একটি এনজিও বলেছে, রমজানকে সামনে রেখে ইসরায়েলি সৈন্য ও হামাসের মধ্যে লড়াইয়ের কারণে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা বাসস সুত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ত্রাণ সরবরাহে বিধিনিষেধ মোকাবেলার লক্ষ্যে সমুদ্র পথে সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ত্রাণ সরবরাহে বিধিনিষেধের জন্য মানবতাবাদী গ্রুপ এবং বিশ্বের সরকারগুলো ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজার ২৪ লাখ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। রমজানের আগে লড়াইয়ে বিরতির আশা দ্রুত ম্লান হয়ে যাচ্ছে, চন্দ্র বর্ষের হিসাব অনুযায়ী আজ রবিবার এখানে প্রথম রমজান শুরু হতে পারে।
শনিবার (৯ মার্চ) সম্প্রচারিত এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধের বিষয়ে ইসরায়েলের নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে ‘ইসরায়েলকে সাহায্য করার চেয়ে ইসরায়েলকে বেশি আঘাত করছে’।
নেতানিয়াহুর ‘ইসরায়েলকে রক্ষা করার অধিকার আছে, হামাসকে অনুসরণ করার অধিকার রয়েছে’ উল্লেখ করে বাইডেন বলেছেন, নেতানিয়াহুর ‘গৃহীত পদক্ষেপের ফলস্বরূপ নিরপরাধ জীবন নষ্ট হওয়ার বিষয়ে তাকে আরও মনোযোগ দিতে হবে’।
জাতিসংঘ বারবার দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে সতর্ক করেছে, বিশেষ করে উত্তর গাজায় যেখানে কোনো বর্ডার ক্রসিং খোলা নেই।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নারী নাসরিন আবু ইউসেফ বলেছেন, গাজার সুদূর দক্ষিণে রাফাহতে, ‘আমরা খুব কমই পানি পেতে পারি।’ প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি এই শহরে আশ্রয় চেয়েছে, যেখানে আতাল্লাহ আল-সাতেল বলেছেন, তিনি যুদ্ধের অবসান চান।
খান ইউনিস থেকে রাফাহতে পালিয়ে আসা সাতেল বলেন, ‘আমরা খুবই ক্লান্ত নাগরিক।’
স্প্যানিশ দাতব্য সংস্থা ওপেন আর্মস বলেছে, সাইপ্রাসের লারনাকা বন্দরে তিন সপ্তাহ আগে ডক করা তার নৌকাটি যাত্রার জন্য ‘প্রস্তুত’ কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে।
গাজার নিকটতম ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ সাইপ্রাস থেকে একটি সামুদ্রিক করিডোর বরাবর এটি হবে প্রথম চালান। যা ইইউ কমিশন রবিবার খুলবে বলে আশা করছে।
ওপেন আর্মসের মুখপাত্র লরা লানুজা এএফপিকে বলেছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘২০০ টন মৌলিক খাদ্যসামগ্রী, চাল এবং আটা, টুনার ক্যান’ এর কার্গো পরিদর্শন করছে।
লানুজা বলেছেন, ইউএস দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন, যা ওপেন আর্মসের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তাদের এমন দল রয়েছে যারা চালানটি আনলোড করার জন্য ‘একটি ডক তৈরি’ করছে।
এদিকে, ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড বলেছে, গাজায় ত্রাণ আনলোড করার একটি অস্থায়ী ঘাট তৈরির জন্য সরঞ্জাম নিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি জাহাজ শনিবার ভার্জিনিয়ার যৌথ ঘাঁটি ল্যাংলি-ইউস্টিস থেকে রওনা হয়েছে।
পেন্টাগন শুক্রবার বলেছে, অস্থায়ী প্লাটফরম স্থাপন করতে ৬০ দিন সময় লাগবে, যা বাইডেন আগের রাতে ঘোষণা করেছিলেন।
স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহ সীমিত থাকায় দেশগুলো বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার দিকে ঝুঁকছে, যদিও প্যারাসুটের ত্রুটি শুক্রবার একটি সরবরাহ বিপর্যয়ে প্রাণহানি ঘটেছে।
হামাস পরিচালিত গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ এবং স্থল অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০,৯৬০ হয়েছে, যার মধ্যে আগের দিনের হামলায় নিহত ৮২ জন।
মন্ত্রণালয় বলেছে, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অন্তত ২৩ শিশু মারা গেছে।