২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে ৫জি সেবা চালু করার বিষয়ে তোড়জোড় চালিয়েছিলেন বিগত সরকারের আমলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এজন্য ২০২১ সালের ডিসেম্বরে টেলিটকের মাধ্যমে ঘটা করে পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি চালু হয়। জাতীয় সংসদ, সচিবালয়সহ ৬টি জায়গা এই সুবিধার আওতায় আসে।
এর আগে গেল বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত নিলামে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে মোবাইল অপারেটরেরা।
এত দ্রুততম সময়ে ৫জি সেবা চালু নিয়ে অপারেটরদের মধ্য থেকেও আপত্তি ছিল। তবে শেষপর্যন্ত নির্বাচনের আগে আর তা করা সম্ভব হয়নি। কারণ, ৫জি সংক্রান্ত গাইডলাইন ছাড়া এই সেবা চালু করা যায় না।
বর্তমানে দেশে ৩জি ও ৪জি সেবা চালু রয়েছে। ২০১৩ সালে ৩জি চালু হয় আর ৪জি সেবা চালু করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালে প্রথম ৫জি সেবা চালু করে দক্ষিণ কোরিয়া।
অবশেষে, তরঙ্গ নিলামের প্রায় দুই বছর পর ৫জি গাইডলাইন চূড়ান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি এটি চূড়ান্ত করে। গাইডলাইন অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটরদের আগামী এক বছরের মধ্যে ৫জি চালু করতে হবে।
দ্বিতীয় বছর থেকে অপারেটরদের ৫জি সেবার সব ধরনের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। যেমন স্ম্যার্টসিটি, স্ম্যার্টহোম, ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম, স্ম্যার্ট গ্রিডের সঙ্গে অন্যান্য নতুন এপ্লিকেশন চালু করতে হবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ইউনিফায়েড লাইসেন্স চালু করেছে। এর ফলে ২জি, ৩জি এবং ৪জি-র জন্য ভিন্ন ভিন্ন যে লাইসেন্স অপারেটরদের নিতে হতো, এখন আর তা করতে হবে না।
২০২২ সালের মার্চে ৫জি তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১০ হাজার কোটি টাকায় মোট ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনে নেয় চারটি মোবাইল অপারেটর। তরঙ্গ নিলামে বলা হয়েছিল, আগামী ৬ মাসের মধ্যে তাদের ৫জি সেবা চালু করতে হবে। কিন্তু তরঙ্গ নিলামের পর গাইডলাইন তৈরি হতেই লেগে যায় দুই বছর।
ওই সময় মোবাইল অপারেটরেরা জানিয়েছিল, ওই মুহূর্তে তাদের জন্য ৫জি চালু করা আর্থিকভাবেও এটি সঠিক সময় নয়। কারণ, অবকাঠামো নির্মাণে উচ্চ ব্যয়, গ্রাহক পাওয়া কঠিন, বিনিয়োগের অর্থ উঠে না আসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কারণ, তারা তখনও ৪জি সেবায় বিনিয়োগ উঠে আসা নিয়েই শঙ্কিত ছিল।
এখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫জির শুরুতে আমাদের ইকোসিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। টাওয়ারগুলোতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগবে। ৫জি প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক সহজলভ্য এবং অ্যাকটিভ শেয়ারিং বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। নেটওয়ার্কগুলো কোথায় কোথায় প্রয়োজন আছে, গ্রাহকেরা ৫জি সেবায় কতটা উপকৃত হবেন বা চাহিদা কেমন হবে, এসব বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রস্তুতির প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪জি-তে সেকেন্ডে যেখানে সর্বনিম্ন গতি ৭ এমবিপিএস, সেখানে ৫জি-র গতি ২০ এমবিপিএস। ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, এটি ব্যবহৃত হবে শিল্পখাতে।
এদিকে, টেলিযোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫জি চালু করতে বিনিয়োগ লাগবে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসায়িক ক্ষেত্র চুড়ান্ত না হওয়ায় বিনিয়োগের ঝুঁকি নেওয়া কঠিন অপারেটরদের জন্য।
তবে এরই মধ্যে অপারেটরেরা ৫জি টেস্ট রান করে। এমনকী এখনো অনেক দেশে ৫জি বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয়নি। বিশ্বব্যাপী মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন জিএসএমএ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ৫জি সেবা গ্রহণকারী ২০০ কোটিতে পৌঁছাবে।