কুল-বিএসজেএ মিডিয়া কাপ ফুটবলের কোয়ার্টারে যে আট দল

কুল-বিএসজেএ মিডিয়া কাপ ফুটবলের কোয়ার্টারে যে আট দল

এই তো ক’দিন আগেই টেস্টে ৫০০ উইকেট পাওয়ার আনন্দে ভেসেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এবার তাকে ধরা দিয়েছে ১০০ টেস্ট ক্যাপ পাওয়াদের ক্লাবে যোগ দেয়ার উচ্ছ্বাস। সাত বছর বয়সে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়েছিল তার। সেই যে শুরু, ৩৭তম বসন্তেও অশ্বিনের ক্রিকেটের বাগান ফুলে ফুলে সুশোভিত। একের পর এক অর্জনে এখন চারিদিকে শুধুই অশ্বিন-বন্দনা। কিংবদন্তিদের কাতারে নাম উচ্চারিত হচ্ছে তার। তবে এতসব অর্জন আর প্রায় তিন দশকের ক্রিকেট-সাধনার পেছনে পরিবার-পরিজনের ত্যাগের গল্পটা হয়ত সবসময় আলোচিত হয় না। অশ্বিনের শততম টেস্টের আগে ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক বিশেষ কলামে সে গল্পটা নিজের মতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তার স্ত্রী প্রিথি অশ্বিন।

ধর্মশালায় শততম টেস্ট খেলতে নামা অশ্বিন বিয়ের আগেই দুই টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন। তাই কলামের শুরুতেই জুটি হিসেবে তাদের টেস্ট সংখ্যা জানিয়ে দেন প্রিথি, ‘আমার স্বামী রবিচন্দ্রন অশ্বিন শততম টেস্টের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, তবে আমাদের বিয়ের বয়স ৯৮ টেস্ট।’

২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর ছোটবেলার বন্ধু প্রিথি নারায়ননের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অশ্বিন। প্রিথির ভাষায় সেদিন থেকেই আমূল বদলে যায় তার জীবন, ‘বিয়ের পরপরই আমাদেরফ কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের জন্য যেতে হয়। সেখানে সংবাদকর্মীদের এমন জোয়ার এসেছিল, যা ছিল আমার কল্পনার বাহিরে। একজন ক্রিকেটারের সঙ্গে আমারে জীবন কেমন কাটবে তা বুঝেছিলাম সেদিন।’

ভারতকে ক্রিকেট-তীর্থ বললে অত্যুক্তি হবে না। ক্রিকেট নিয়ে সেখানকার উন্মাদনার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা টানা কঠিন। ক্রিকেটারদের সেখানে ব্যস্ত জীবন কাটাতে হয়। তিন ফরম্যাটে সমানতালে আলো ছড়ানো অশ্বিনের দম ফেলার ফুরসত ছিল না। জাতীয় দলের একের পর এক সিরিজ খেলতে অশ্বিন যখন আজ এই শহর তো কাল অন্য শহরে ঘুরছিলেন, প্রিথিকেও সঙ্গী হতে হয়েছে তার।

হোটেলে-হোটেলে কাটানো জীবন নিয়ে প্রিথির ভাবনা, ‘এটা মোটেও আকর্ষণীয় নয়। হ্যাঁ, আমরা সুন্দর-সুন্দর হোটেলে থাকতাম, তবে ওই পর্যন্তই। কারণ হোটেল রুমে ওই মানুষটার (অশ্বিন) সঙ্গে খুব কম সময় কাটানোর সুযোগ হত। আর দেশে (ভারতে) খেলা হলে তো হোটেলের বাইরে যাওয়ার কথা ভাবাও যেত না।’

তবে ধীরে ধীরে অশ্বিনের কর্মব্যস্ত জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখেন প্রিথি। অনেক ত্যাগের স্তম্ভেই গড়ে ওঠে জীবনের দারুণ সৌধ। ‘যখন আমাদের বাচ্চা হল, তখন আমার পুরোটা সময়ই সেখানে চলে গেল। এটা বুঝতে আমার কিছুটা সময় লেগেছে যে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে কিছু পেতে হলে মূল্য চুকাতে হয়। হয়ত সে তার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে পারবে না’- যোগ করেন প্রিথি।

করোনাকালে পুরো বিশ্ব ঘরে বন্দী হয়ে পড়েছিল। ক্রিকেট মাঠেও তখন বল গড়ায়নি। তবে অশ্বিন পরিবারে সে সময়টা যেন ‘আশীর্বাদের’ মতোই এসেছিল। প্রিথির ভাষায়, ‘করোনার সময় অশ্বিন প্রথম বুঝতে পেরেছিল যে, পরিবারও তার জীবনের একটা অংশ হতে পারে।’

একটা তিন ফরম্যাটেই ভারতীয় দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলেন অশ্বিন। কুম্বলে-হারভাজন পরবর্তী যুগে ভারতের মূল স্ট্রাইক স্পিনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। তবে ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন অবধারিত। অশ্বিনের ক্যারিয়ারেও তেমন চরম অনিশ্চয়তায় ঘেরা পর্ব এসেছিল ২০১৭ সালে। সাদা বলের ক্রিকেট থেকে হঠাৎ নির্বাসনে পাঠানো হয় অশ্বিনকে। দল থেকে বাদ পড়েছেন নাকি বিশ্রাম দেয়া হয়েছে, সেটাও নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। এমন কঠিন সময়ে পরিবারের কাছেও মন খুলে কিছু বলতে পারছিলেন না অশ্বিন, ‘আমি অশ্বিনকে তখন কষ্ট পেতে দেখেছি। কিন্তু আমার তখন দুইটা ছোট বাচ্চা, তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তাই আমাদের কাছেও নিজের কষ্টটা মেলে ধরতে বেগ পেতে হচ্ছিল তার।’ সে সময় মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিজেকে ঠিক রাখতে কাউন্সিলরের শরণাপন্নও হতে হয় অশ্বিনকে।

কঠিন সে সময়কে পেছনে ফেলে অশ্বিন এখন সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাজিমাত করছেন। ঘরের মাটিতে ভারতের তুরুপের তাস হিসেবে একের পর এক জয়ে ভূমিকা রাখছেন। অশ্বিনের শততম টেস্টের মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে এই কলাম লিখলেও প্রিথি জানালেন, ৫০০ উইকেটের জন্য তাদের অপেক্ষাটা বেশি ছিল।

তবে অশ্বিনের ৫০০ উইকেট প্রাপ্তির মুহূর্তেই কঠিন একটা ঝড় বয়ে যায় অশ্বিন পরিবারের উপর দিয়ে। ‘বাচ্চারা মাত্র স্কুল থেকে ফিরেছিল, এর মিনিট পাঁচেক পরই ৫০০তম উইকেট পায় অশ্বিন। শুরু হয় শুভেচ্ছাবার্তার বন্যা। আমরা শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ জানাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলাম। তখনই আন্টির (অশ্বিনের মা) পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনি।’ জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্তে এমন দুঃসংবাদ পেয়ে অশ্বিন ছুটে যান মায়ের শয্যা পাশে।

কলামের শেষটায় অশ্বিনকে নিয়ে গর্বের কথা জানান প্রিথি, ‘অভিনন্দন অশ্বিন। আমরা একসঙ্গে ৯৯ টেস্টে এলাম। তুমি যত ম্যাচ খেলেছ এবং যেসব ম্যাচ খেলা হয়নি-তার সবগুলোর জন্যই আমরা গর্বিত। সুন্দর একটা জার্নি চলছে, আশা করি এর বাকি অংশটাও তুমি ঠিক এতটাই উপভোগ করবে।’

Scroll to Top