ফেনীর পাঁচগাছিয়া ও ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ফেনী হর্টিকালচার সেন্টার। সারি সারি গাছ গাছালির মনোরম পরিবেশ হওয়াতে ফেনীর মানুষের কাছে নারিকেল বাগান বাড়ি নামেও পরিচিতি পেয়েছে জায়গাটি। হর্টিকালচার সেন্টারটি বীজ উৎপাদন, গবেষণা ও চারা বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন রকমের দেশি-বিদেশি ফুল,ফল,শাকসবজি, ঔষধি গাছের চারা ও বীজ উৎপাদনের উপর গবেষণা ও বিক্রয় করা হয়।
হর্টিকালচারে যেসব ফল ফলাদি ও ফসলের চারা উৎপাদিত হয় তার মধ্যে ফলের মধ্যে রয়েছে, নারিকেল (সিংহোলী), নারিকেল (মালয়পিং), নারিকেল (ডোয়ার্ফ) ভিন্ন জাতের আম, রামবুটান, পেয়ারা (থাই, কাঞ্চননগর),আম (বানানা ম্যঙ্গো), (ভিয়েতনাম), আতাফল, সফেদা, জামরুল, জলপাই, ড্রাগন ফল, বিভিন্ন জাতের কলা, কাঁঠাল, আমলোকি, অরবরই, চালতা, লেবু, কামরাঙা, হরিতকী, বাউকুল, আপেল কুল, নিম, জাম্বুরা, নাশপাতি, কামরাঙা, মাল্টা, আমড়া, লিচু, গোলাপজাম, কফি, কাবাবচিনি, স্ট্রবেরি, দারুচিনি, লেবু (সিডলেস), (এলাচি) তেজপাতাসহ নানা জাতের ফল।
ফুলের মধ্যে রয়েছে নানা জাতের গোলাপ, জবা, বেলি, গন্ধরাজ, পাতাবাহার ইত্যাদি। শাকসবজি মধ্যে দেশি মরিচ ,পটকা মরিচ, সিমনাথ, বেগুন, হাইব্রিড লাউ, তাল বেগুন, সীম শশা, করলা, মিষ্টি কুমড়া,শসিন্দা, স্কোয়াশ, আলু, টোমেটো, চাল কুমড়াসহ নানা জাতের দেশি বিদেশি সবজির চারা।
ফেনীর হর্টিকালচারের কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন,হর্টিকালচার সেন্টারটি সরকারি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ফুল, ফল, শাকসবজি, ঔষধি মসলা চারা বিক্রির পাশাপাশি নতুন নতুন দেশি-বিদেশি জাত গুলো সংগ্রহ করা হয় এবং গবেষণা করে নতুন চারাগাছ উদ্ভাবন করা হয় কৃষক ও বাগানিদের জন্য ।
তিনি জানান, বাণিজ্যিক ভাবে সাড়া পাওয়া যায় তেমন ফল, ফুল, শাকসবজির বিভিন্নরকম জাত গুলো নিয়ে কাজ করা হয় এখানে ।এছাড়াও সরকারি দামে ও সূলভ মূল্যে কৃষক ও বাগানিরা যাতে চারা পায় সেটা চেষ্টা করা হয় এবং বিভিন্ন রকমের পরামর্শ প্রদান করা হয়। প্রান্তিক পর্যায় থেকে শহরের সাধারণ মানুষ হর্টিকালচারে এসে নিজেদের পছন্দ মত গাছ কিনতে আসে বলে জানান তিনি।
ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা, নোয়াখালী, মিরসরাই, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাগানিরা ও কৃষকরা স্বল্প মূল্যে ক্রয় করতে আসেন এ হর্টিকালচারে।
কথা হয় ছাদ কৃষি প্রেমী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে তিনি জানান, হর্টিকালচার থেকে সরকারি দামে ও সুলভ মূল্যে এবং মানসম্মত চারা কেনা যায়। আমি ছাদ বাগানের জন্য এইখান থেকে সবসময়ই চারা কিনি। আজও পরশুরাম থেকে লেবুর চারা কিনার জন্য এসেছি।
জাহিদ নামে আরেকজন ক্রেতা জানান, হর্টিকালচারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে ৫ টা সিডলেস লেবুর চারা নিয়েছি ২০ টাকা করে। কিন্তু নার্সারী থেকে কিনলে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হতো।
হর্টিকালচারলের কর্মকর্তারা জানান, ফেনীর বাইরে হয়ে যাওয়াতে মানুষজন হর্টিকালচারের ব্যাপারে তেমন বেশি অবগত নয়। প্রচার-প্রচরাণা হলে এটি আরো ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলবে বলে মনে করেন তারা।
এছাড়াও হর্টিকালচারের পাশে সারি সারি ফুল,ফলের গাছ,শান্ত,ছায়া ঘেরা বাগান দেখতে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়ে যায়।কেউ কেউ এটিকে নারিকেল বাগান বাড়ি ও বলে থাকে। নারিকেল গাছের সারির পাশে রয়েছে কিছু আম গাছ যেখানে প্রতিবছর প্রচুর আম ধরে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা হর্টিকালচারের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আসে। কর্মকর্তাদের মতে হর্টিকালচার থেকে বছরে সরকারের রাজস্বে জমা হয় ১৮ থেকে ১৯ লাখ টাকা।
ফেনীর হর্টিকালচারের কর্মকর্তা আহসান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, হর্টিকালচার থেকে আমরা বছরে ১৮ থেকে ১৯ লাখ টাকা রাজস্ব জমা দিই।ব্যবসার উদ্দেশ্য না সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবেই এ টাকাটা সরকারি রাজস্বে জমা দেয়া হয়। তিনি বলেন,আমাদের গাছের চারার দাম সরকারি দামে। সরকার যেটা নির্ধারণ করে দেয় সে অনুযায়ী চারা বিক্রি করা হয়।
ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘ ব্যানানা ম্যাঙ্গো’
ব্যানানা ম্যাঙ্গো আমেরই একটি জাত। আমটি দেখতে কলার মত আকার ও পাকলে রং একেবারে পাকা কলার মত হলুদ বলে এর নাম ব্যানানা ম্যাঙ্গো। ফেনীর হর্টিকালচার সেন্টারে প্রথমে ভিয়েতনাম থেকে এ আমের চারা আনা হয়। ফেনী থেকে সারা দেশে এই আম ব্যাপকভাবে সাড়া পেলেছে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এআমের চারা কিনার জন্য সাধারণ মানুষ ভীড় করে হর্টিকালচার সেন্টারে। যা ইতিমধ্যে জেলাজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
হর্টিকালচার কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন,ব্যানানা ম্যাঙ্গো থাইল্যান্ডের একটা ভ্যারাইটি। ব্যানানা ম্যাঙ্গো ব্যাপকভাবে সারাদেশে সাড়া ফেলেছে এবং আমের মৌসুমে এই আমের চাহিদা থাকে ব্যাপক। বাণিজ্যিক ভাবে বাগানিরা ও কৃষকরা লাভবান হয়েছে এই ব্যানানা ম্যাঙ্গোর চাষ করে। ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা,নোয়াখালী, মিরসরাই, চৌদ্দগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাগানি ও কৃষকরা এ গাছের চারা নিতে আসে।
হর্টিকালচারের রক্ষণাবেক্ষণকারী এমদাদ বলেন,প্রথম এ জাতের আমের চারা আমরা ভিয়েতনাম থেকে আনি। আনার পর চারা থেকে মাতৃগাছ হয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে বাড়তে বাড়তে সারাদেশব্যাপী জনপ্রিয়তা পায় এ ব্যানানা ম্যাঙ্গো। এ জাতের আম ১৫-১৬ বছর আগে আনা হলেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিগত ৫-৬ বছরে। এ আম শুধু এক মৌসুমে পাওয়া যায় এবং অন্যানা আমের তুলনায় এই আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি।