আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইমরান খান ও তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে স্থানীয় গণমাধ্যমকে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দেশটির বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।
আজ ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা। ইতিমধ্যে পাকিস্তানি গণমাধ্যমে ইমরান খানের বক্তব্য, তার দলের জনসমাবেশ অথবা বিক্ষোভ প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে এখন ইমরান খান এবং তার দলের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধের মাত্রা আরও বাড়ানো হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানি সাংবাদিকদের ভাষ্য
আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় বেসরকারি নিউজ চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সাংবাদিককে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠান দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও ইন্টারনেটভিত্তিক নিউজরুমের সাংবাদিকরাও তার মতো একই ধরনের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পেয়েছেন বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন।
ওই সাংবাদিক বলেন, মূলত, সামরিক বাহিনীর ওই কর্মকর্তাআমাদের চ্যানেলে নির্বাচন বিষয়ে প্রচারিত কিছু অনুষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমরা যেন আগামীতে পিটিআইর পতাকা না দেখাই বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র নিয়ে কিছু উল্লেখ না করি। এই প্রার্থীদের পিটিআই সমর্থিত না বলে ‘স্বতন্ত্র’ বলতে হবে এবং তারা কোন দলের সমর্থন পাচ্ছেন, তা উল্লেখ করা যাবে না বলে নির্দেশ দেন তিনি।
সংবাদ মাধ্যমগুলোর পদক্ষেপ
এই বার্তা পাওয়ার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর চ্যানেলটির সব ধরনের সম্প্রচার থেকে পিটিআইর নাম বাদ দেওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির বিভিন্ন চ্যানেলের আরও ৩ জনসহ মোট ৭ জন সাংবাদিক আল জাজিরাকে নিশ্চিত করেন, তাদেরকে পিটিআই’র পতাকা বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে দলটির যোগসূত্র নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সরকারি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য
পাকিস্তানের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি (পিইএমআরএ) এখন পর্যন্ত কোন দল বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপ করে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
পাকিস্তানি সাংবাদিকদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী মুরতাজা সোলাঙ্গি। তিনি আল জাজিরাকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় জানান, আমরা এই ধরনের কোন নির্দেশ দেইনি।
সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম উইং (আইএসপিআর) এই বিষয়ে আল জাজিরার করা প্রশ্নের কোন জবাব দেয়নি।
গত বছর আগস্ট থেকে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের মামলায় কারাবন্দি আছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। ২০২২ এর এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে পড়েছেন তিনি এবং তার দল।