বিদ্রোহীদের কাছে হেরে যাওয়ার আশংকায় রয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। প্রতিদিন নতুন করে একের পর এক সেনা ঘাঁটি হারাতে হারাতে ক্ষমতা হারানোর পথে রয়েছেন দেশটির সামরিক জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তাপ্রধান ৬৭ বছর বয়সী মিন অং হ্লাইং ২০২১ সালে জনপ্রিয় নেত্রী অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সম্প্রতি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা জান্তাবিরোধী বাহিনীর তুমুল আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে। গত বছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে আক্রমণ শুরু করে বিদ্রোহীরা। তাদের দাবি, সীমান্ত এলাকার বেশ কিছু শহর এবং সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।
কেন বিদ্রোহীদের সাথে হেরে যাচ্ছে জান্তা সরকার?
এমন হতে থাকলে, কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত হয়ে পড়বে মায়ানমার। দেশটি ভেঙ্গে নতুন কোন দেশের সৃষ্টিও হতে পারে। এখন প্রশ্ন, যথেষ্ট সামরিক সক্ষমতা থাকার পরও কেন হেরে যাচ্ছে জান্তা সরকার। মূলত, একের পর এক সামরিক ঘাঁটি আক্রমনের পর দখল করে জান্তা সরকারকে চাপের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তাই এই গোষ্ঠীর সাথে পেরে উঠছে না জান্তারা।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারা?
এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত। আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি এবং ট্যাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এই তিন বাহিনীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গত বছর অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় এই ৩ সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ অভিযান।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের অগ্রগতি
ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। এমনকি জান্তা সরকারের সদর দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বিদ্রোহীরা। দেশটির শান প্রদেশের লাউক্কাই শহরে জান্তার সদর দপ্তরের একটি অংশের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জান্তা সরকারের সেনারা তাদের অস্ত্র এবং গোলাবারুদ বিদ্রোহী সেনাদের কাছে হস্তান্তর করছে। ফলে জান্তা সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সামরিক ঘাটিটি থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালয়েন্সের ঘাঁটিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
মিত্ররা কি শত্রু হয়ে গেল?
গত বছর থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অসন্তুষ্টতার দেখা যাচ্ছে। দেশটির আর্মি জেনারেল সো উইন তার সৈন্যদের দুর্বল কর্মক্ষমতার জন্য অসন্তুষ্ট বলে জানা গেছে। তাকে সেনাবাহিনীর কমান্ড গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলেও তিনি তিনি এই বিষয়ে এখনও কোন পদক্ষেপ দেখাননি। তাই গত তিন মাসে দেশটির সামরিক বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সামরিক নেতৃত্বে যে ফাটল ধরিয়েছে তা যেন অনেকটাই নিশ্চিত। রিপোর্ট বলছে মিয়ানমারের বেশিরভাগ সেনাসদস্যরাই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের পক্ষে। এছাড়াও গত কয়েক মাসে পদত্যাগ করেছেন বহু সেনা সদস্য।