সাতক্ষীরার কাঁচা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধমুখী হওয়ায় অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ । সকল পণ্যের দাম স্থিতিশীল থেকেও একধরনের অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য একমাত্র সম্বল ব্রয়লার ও সোনালী মুরগি। কিন্তু দাম বৃদ্ধি করে চলেছে অসাধু চক্র। মাংসের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে এসব মানুষেরা।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সুলতানপুর বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে এদিন বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়। সোনালী মুরগী গত সপ্তাহে ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে কিন্তু দাম বৃদ্ধি করে ৩৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দেশে অনেক জায়গায় গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬০০ টাকা বিক্রি হলেও সাতক্ষীরা বাজারে ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছ, সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেলের দাম গত সপ্তাহের ন্যায় স্থিতিশীল রয়েছে।
মুদি বাজারে গত সপ্তাহে চাল কেজি প্রতি সর্বনিম্ন আটাশ ৫৮ টাকা, বর্তমান ৫৮ টাকা; সর্বোচ্চ মিনিকেট ৫৯ টাকা, বর্তমান ৬২ টাকা; মশুর ডাল মোটা কেজি প্রতি গত সপ্তাহে ১১৫ টাকা, বর্তমান ১০৫ টাকা, চিকন ১৪৫ টাকা, বর্তমান ১৪০ টাকা; বুট ডাল ৬০ টাকা, বর্তমান ৬৮ টাকা, মুগ ডাল চিকন ১৪৫ টাকা, বর্তমান ১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল (বোতলজাত) গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ১৭২ টাকা, বর্তমান ১৬৬ টাকা, খোলা তেল ১৪৫ টাকা, বর্তমান ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরিষা তেল গত সপ্তাহের দামেই কেজি প্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মশলা জাতীয় খাদ্যর দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। পেয়াজ গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ৯০ টাকা, বর্তমান ৭৫ টাকা; রসুন দেশি কেজি প্রতি ১৪০ টাকা, বর্তমান ১৪০ টাকা, চায়না ১৩০ টাকা, বর্তমান ১৩০ টাকা; আদা ১৭৫ টাকা, বর্তমান ১৯০ টাক; শুকনা মরিচ গত সপ্তাহে ৪৬০ টাকা বর্তমান ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবচেয়ে চাহিদা শীতকালীন সবজি। গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কমই রয়েছে কিছু সবজির। বাজারে গত সপ্তাহে ফুলকপি কেজি প্রতি ৪০ টাকা, বর্তমান ৩৫ টাকা; বেগুন ৫০ টাকা, বর্তমান ৫০ টাকা; শিম ৩০ টাকা, বর্তমান ৪০ টাকা; ওলকপি ২৫ টাকা, বর্তমান ২৫ টাকা; বাঁধাকপি ৩০ টাকা, বর্তমান ৩০ টাকা; লালশাক আটি ৫ টাকা, বর্তমান ৫ টাকা; কলা ৩০ টাকা, বর্তমান ৩০ টাকা; মেটেআলু ৪৫ টাকা, বর্তমান ৫০ টাকা; বরবটি ১৫ টাকা, বর্তমান ১৫ টাকা; পালংশাক ৭ টাকা, বর্তমান ৭ টাকা; ঢেড়স ৩০ টাকা, বর্তমান ৩০ টাকা; নতুন আলু ৫০ টাকা, বর্তমান ৫০ টাকা; কাঁচা ঝাল ৬০ টাকা, বর্তমান ৬০ টাক; টমেটো ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ‘শীতকালীন সবজি বাজারে আসছে তবে আমরা বেশি দামে ক্রয় করছি বলে বেশি দামে বিক্রি করছি। গত বছর বাজারে সবজি উঠার পর পরই দাম অনেক কম ছিলো। আমরাও তো লাভ করবো আমাদেরও তো ছেলে মেয়ে আছে, তাই যে দামে কিনছি একটু লাভ করে সেটা বিক্রি করছি। তবে বেশি দামে বিক্রি করে আমাদের লাভটা কি শুধু শুধু ক্রেতার সাথে বাকবিতন্ডা আর ভালো লাগে না।’
বাজার করতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘সবকিছুরই দাম বাড়ছে। আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। সবকিছুর দাম বাড়ল, আমাদের আয় তো বাড়েনি। শীতের মৌসুমে অনেক শাক সবজি বাজারে আসে তবে দাম যেন আগুন। সব কিছু কেনাকাটার বাইরে একদম। অনেক জিনিস প্রয়োজন থাকার পরও কিনতে পারি না।’
ক্রেতা আফজালুর রহমান বলেন, ‘ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছে। এই ঊর্ধগতির বাজারে একধরনের অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। এই অসাধু সিন্ডিকেট জানে নিম্ন আয়ের মানুষের গরুর মাংস, খাসির মাংস ক্রয় করার ক্ষমতা নেই, তারা অবশ্যই ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির মাংসের দিকে ঝুঁকবে। এজন্য এই অসাধু লোকাল সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির মাংসের দাম বৃদ্ধি করেছে। সঠিক মনিটরিং যদি থাকত নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না’ ।