পোর্ট মোর্সবি, ১১ জানুয়ারি – পাপুয়া নিউ গিনির রাজধানী পোর্ট মোরেসবিতে বড় ধরনের দাঙ্গা ও বিশৃঙ্খলার পর বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশের বেতন কমানোর বিষয় নিয়ে ধর্মঘট শুরু হয়। এরপরেই শত শত লোক রাস্তায় নেমে আসে এবং গাড়িতে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে দোকান, সুপারমার্কেট লুট করা শুরু করে। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাপুয়া নিউ গিনিতে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ১৫ জন নিহত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী এবিসি আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে।
দাঙ্গায় রাজধানী পোর্ট মোরেসবিতে আটজন মারা গেছে এবং দেশের উত্তরে লে-তে আরো সাতজন নিহত হয়েছে বলে দেশটির পুলিশের বরাত দিয়ে এবিসি জানিয়েছে। পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাজধানীতে উত্তেজনা কমে গেছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘শহরে গতকাল পুলিশ কর্মস্থলে ছিল না। তাই মানুষ লুটপাট চালিয়েছে। তবে সব মানুষ নয়, কিছু লোক আমাদের শহরের কিছু অংশে এই লুটপাট চালিয়েছে।’
দেশটিতে পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে, এমন খবরে স্থানীয় সময় বুধবার সংসদের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হয়।
এ বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে বলেছেন, কম্পিউটারের ত্রুটির কারণে সরকারি কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ১০০ ডলার কেটে নেওয়া হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীরা কর বাড়ানোর যে অভিযোগ করেছে, তা মূলত করা হচ্ছে না।
মারাপে একটি সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে ভুল তথ্য ঘুড়ে বেড়াচ্ছে এবং রাস্তায় পুলিশ না থাকায় অনেকে সুযোগ নিয়েছে।’ তিনি আবারো জানান, ‘আমরা কর বাড়াচ্ছি না।’
একটি টিভি ফুটেজে শহরজুড়ে বিশাল জনসমাগম ও লুটপাটের চিত্র দেখা যায়। অ্যাম্বুলেন্সের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে।
পোর্ট মোরেসবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বলেছে, পুলিশ কাজে ফিরেছে, তবে উত্তেজনা রয়ে গেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের আরো বেশ কয়েকটি এলাকায় সহিংসতার খবর শোনা গেছে। তাদের কম্পাউন্ডের কাছে গোলাগুলির কথা জানিয়েছে। এছাড়া বড় একটি শপিং সেন্টারেও আগুন দেওয়া হয়েছিল। তবে গতকাল বুধবার রাত থেকে বেশিরভাগ সহিংসতা কমে আসে।
ন্যাশনাল ক্যাপিটাল ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর পাওয়েস পার্কপ একটি রেডিওতে বলেছেন, সুবিধাবাদীরা এই লুটপাট চালাচ্ছে। সরকার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। পার্কপ তাঁর রেডিও ভাষণে আরো বলেছেন, “আমরা আমাদের শহরে যে ভয়াবহ সংঘর্ষ দেখছি, তা আমাদের শহর এবং আমাদের দেশের ইতিহাসে আগে কখনও ঘটেনি।” তিনি বলেছেন, ‘এটা অনেক দুঃখজনক যে, আজ কিছু মানুষ তাদের জীবন হারিয়েছে।’ যদিও তিনি নিহতদের সংখ্যা উল্লেখ করেননি।
এদিকে দেশটির দূতাবাস জানিয়েছে, চীনা মালিকানাধীন দোকানে ভাংচুর ও লুটপাটের শিকার হওয়ায় বেশ কয়েকজন চীনা নাগরিক সামান্য আহত হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, দেশের হাই কমিশন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে ক্যানবেরা পাপুয়া নিউ গিনির কাছ থেকে সাহায্যের জন্য কোনো অনুরোধ পায়নি। দেশটি বলেছে, ‘আমরা এই কঠিন সময়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি। পাপুয়া নিউ গিনির সরকারের কাছ থেকে আমারা সাহায্য করার অনুরোধ পায়নি কিন্তু… পাপুয়া নিউ গিনি আমাদের বন্ধু, তাদের সঙ্গে আমাদের দারুণ সম্পর্ক।’
সূত্র: কালের কন্ঠ
আইএ/ ১১ জানুয়ারি ২০২৪