গাছের ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় বরই। সবুজ পাতা ভেদ করে ভারত সুন্দরী কুলগুলো যেন দেখে মনে হয় লাল টকটকে আপেল। সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল এ জাতের কুল খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিমুলিয়া এলাকায় সাত বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন উপজেলার কৃষক আবু সাইদ। সেখানেই পরিচর্যাসহ কুল তোলায় ব্যস্ত শ্রমিক মালিক ও ফড়িয়ারা।
উপজেলার আদর্শ কৃষক আবু সাইদ কৃষি বিভাগের উদ্ভাবন করা নতুন জাতের কুল ভারত সুন্দরী চাষ করে এলাকার জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই জাতের বাগান করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
দিন দিন আধুনিক কৃষি বিস্তার লাভ করায় এ অঞ্চলে ফলজ বাগানের সংখ্যা বাড়ছেই। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক তার বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যান। পাশাপাশি এ বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করা বেকার যুবকদের উৎসাহ প্রদান ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি।
আবু সাইদ বলেন, বাড়ির পাশের একটি বড় পেয়ারা বাগান দেখে আকৃষ্ট হই। এরপর তার সাথে অংশীদারত্ব নিয়ে পেয়ারা বাগান গড়ে তুলি। লাভ ভালো হওয়ায় বাগানের সংখ্যা বাড়িয়ে দেই।
তিনি জানান, এবার সাত বিঘা জমি লিজ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে ভারত সুন্দরী কুলের চারা এনে রোপণ করি। দিশা সমন্বিত কৃষি বিভাগের কারিগরি সহায়তায় বাগান করতে নানা ধরনের সহযোগিতা করেছে।
তিনি বলেন, ‘বাগানে প্রায় সাতশত গাছ রয়েছে। বাগান করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। বাগান তৈরির শুরু থেকে আমি নিজে শ্রমিকদের নিয়ে বাগান পরিচর্যার কাজ করে যাচ্ছি। গাছের যত্ন নেওয়া এবং সঠিক সময় জৈব ও গোবর সারসহ কিছু রাসায়নিক সারও গাছের গোড়ায় দূরত্ব বজায় রেখে দেওয়া হয়েছে। গাছে যাতে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক বালাই আক্রান্ত করতে না পারে এ জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শে জীবানুমুক্ত ট্যাবলেট প্রত্যেক গাছ থেকে ১ ফুট ৬ ইঞ্চি দিয়ে পুতে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রথমবারের মতো বাগান থেকে বরই সংগ্রহ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে প্রায় দেড়লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। এখনো প্রায় চার লাখ টাকার বিক্রি হবে বলে আশা করছি। এতে করে আমার সব খরচ বাদ দিয়ে নীট আড়াই লাখ টাকা লাভ থাকবে।
বাগানের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মুজিবুল ইসলাম জানান, এই বাগানের শুরু থেকে দিনে ও রাতে তিনি দেখাশোনার কাজ করেন। এ ধরনের একটি নতুন উদ্ভাবনের ফল ভারত সুন্দরী কুল বাগানের পরিচর্যার কাজে থাকতে পেরে সে নিজে খুব খুশি। বাগানের সব গাছগুলোতে প্রথম চালানের বিক্রি শুরু হয়েছে। এই বাগানে কাজ করে আমি যে পারিশ্রমিক পায় তাতে করে বেশ ভালোই আছি।
বাগান থেকে বরই কিনতে এসেছিলেন শহীদুল ইসলাম। তিনি শহরের মজমপুরে বরই বিক্রি করেন। এই বাগান থেকে একশো টাকা কেজি হিসেবে এক মণ বরই কেনেন প্রতিদিন৷ এই বাগানের বরই বেশ সুস্বাদু বলেও জানান তিনি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জমিতে এবারে বিভিন্ন জাতের কুলের বাগান রয়েছে। বাগানগুলো সঠিক পরিচর্যার জন্য কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ৩০ টি বরই বাগান আছে। আবু সাইদ আমাদের পরামর্শ নিয়ে উন্নত জাতের ভারত সুন্দরী বরই বাগান করেছেন। বাগানে প্রচুর পরিমাণে কুল ধরেছে। বাগানটি দেখে অনেকেই বাগান তৈরির জন্য আমাদের কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন। আশাকরি বাগান মালিক কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন।
দিশা সংস্থার কৃষি অফিসার এনামুল হক জানান, রৌদ্রোজ্জ্বল, উচুঁ জমিতে কুল বাগান ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের আলো লাগবে সেই জমির কুল বেশি মিষ্টি হবে। ৫-৬ হাত দূরত্বে গাছের চারা রোপণ করতে হয়। তুলানামূলক রোগ-বালাইও কম।
তিনি বলেন, আমরা পিকেএসএফের সহযোগিতায় তামাক চাষ কমাতে ফলজ বাগান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে দিশা সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে ফল বাগান গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে অনেক তরুণ উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছে। তাদের সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প’র প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, উপযুক্ত যত্ন ও পরিচর্যার দ্বারাই একটি কুল গাছ বা কুল বাগান থেকে আশানুরূপ ভালো গুণগত মানসম্পন্ন ও অধিক ফলন আশা করা যায়। কুল বাগানে প্রথম ৪-৫ বছর শীতকালীন ও অন্যান্য ডাল জাতীয় ফসল চাষ করে তা থেকে আলাদা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক উন্নত জাতের সুস্বাদু কুল চাষ হচ্ছে এ জেলায়। কুল বাগান করে লাভবান হওয়ায় আগের থেকে কুলের বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে।’