সামিউল হক সুমন
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তির নাম হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। শিক্ষা, গবেষনা, কৃষি কিংবা ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। জানা যায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১৩৩ মিলিয়ন চাকরীর সুযোগ তৈরী করবে এই নতুন প্রযক্তি। শুধু তাই নয় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে এই প্রযুক্তির উপরে। চলুনে জেনে নিই কি এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি, এর ব্যবহার এবং এর ভাল কিংবা খারাপ দিক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। গবেষকেরাও এর সংজ্ঞা নিয়ে একমত নন। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক ল্যারি বার্নবাউম বলেন, সাধারণভাবে বলতে গেলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করতে যন্ত্র তৈরি ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়। একই কাজ কোনো ব্যক্তি করলে আমরা তাকে বুদ্ধিমান বলে থাকি। এটি বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে, যাকে আমরা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা সংক্ষেপে এআই বলে থাকি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এর ইতিহাস
যদিও এআই -এর একক প্রতিষ্ঠাতা নেই, তবুও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে এই প্রযুক্তির জনক হিসেবে ধরা যেতে পারে। যেমন জন ম্যাকার্থি কে প্রায়শই শব্দটি তৈরি করার জন্য এবং ডার্টমাউথ সম্মেলন আয়োজনের জন্য “এআই-এর জনক” হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অবদানকারীদের মধ্যে রয়েছে মারভিন মিনস্কি, অ্যালেন নেয়েল এবং হার্বার্ট এ. সাইমন, যারা রোবোটিক্স এবং সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, ১৯৫০ সালে, যখন প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার চালু হয়েছিল, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন এটি এমন একটি যন্ত্রের যা দ্রুত ব্লকগুলি সংগঠিত করতে পারে, চেকার খেলতে পারে এবং এমনকি জটিল গাণিতিক গণনাও করতে পারে, যা একজন সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে খুঁজে পাওয়া যায়। ক্ষেত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ সম্মেলনের সময় তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে “চিন্তা মেশিন” ধারণাটি চালু করা হয়েছিল।
এআই এর ব্যবহার
এআই এর ব্যবহার বর্তমান বিশ্বে দিন দিন বেড়েই চলেছে। কৃষিক্ষেত্র, চিকিৎসা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রতিটি কেন্দ্রতে আজ এআই এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। এআই এর ব্যবহার মানুষের জীবনকে করে তুলেছে আরো সহজতর। এআই এর মাধ্যমে গাছে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা যায়। সারের পরিমাণ থেকে শুরু করে কখন সেচ প্রদান করতে হবে তাও আমাদের বলে সাহায্য করতে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা ও ছোটখাটো ঔষধ প্রদান এআই দ্বারা সম্ভব। এছাড়াও ব্যাংকিংয়ে, সেনাবাহিনীতে, নৌবাহিনীতে এআই-এর ব্যবহার বিপুলভাবে বেড়ে চলেছে। তাছাড়া এআই চালিত জানবাবাহন একটি নতুন প্রযুক্তি যা আমাদের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলতে পারে। স্ব-চালিত গাড়িগুলি (যেমন: Tesla, Waymo, Cruise) এআই অ্যালগরিদম, কম্পিউটার ভিশন এবং সেন্সর প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচল করতে পারে।
এআই এর ভাল দিক
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা এআই ব্যবহার এর সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে এর মাধ্যমে খুব দ্রুত স্বিদ্বান্ত নিতে পারা যায়। যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা আছে যেখানে চিকিৎসকদের যে কোনও ধরণের তথ্য খুব দ্রুত দিতে পারে এবং এআই এর মাধ্যমে হাসপাতালের অনেকগুলো কাজ করা সম্ভব হয়। তাছাড়াও কম্পিউটার গেমের ক্ষেত্রে এআই এর মাধ্যেমে দ্রুত স্বিদ্বান্ত নেয়া যায় যা একজন গেমারের জন্য অনেক কার্যকরী।
এআই এর খারাপ দিক
এআই ব্যবহারের সবচেয়ে খারাপ দিক হতে পারে গোপনীয়তা। এআই ব্যবহার করে যে কারো তথ্য খুব সহজের বের করা ফেলা সম্ভব। এআই সিস্টেমগুলি বিপুল পরিমাণে ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করতে পারে যা পরবর্তিতে এর অপব্যবহার করা করা সম্ভব।
সর্বশেষ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এমন একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি যা আমাদেরকে আরও দক্ষ এবং আরও সৃজনশীল হতে সাহায্য করতে পারে, এবং এটি আমাদেরকে নতুন এবং উদ্ভাবনী উপায়ে সমস্যাগুলি সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে। যদিও এআই উন্নয়ন কার্যক্রম এখনও প্রক্রিয়াধীন তারপরেও ইতিমধ্যেই অনেক শিল্প এবং সেক্টরে প্রভাব ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, এআই স্বয়ংচালিত গাড়ি, চিকিৎসা নির্ণয় এবং কৃত্রিম ভাষা অনুবাদের মতো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আএই একটি প্রযুক্তি যা ভাল বা মন্দের উভয় কাজেই ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইনটেলিজেন্সের (এজিআই) দিকে এগোবে। এটি এমন একটি সীমা যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের সমকক্ষ হয়ে উঠবে বা মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে।
লেখক: নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী ও প্রভাষক; আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি – বাংলাদেশ
সারাবাংলা/এসবিডিই