আখেরি চহর্ শামবেহ বিকৃত হয়ে ‘আখেরি চাহার শোম্বা’

আখেরি চহর্ শামবেহ বিকৃত হয়ে ‘আখেরি চাহার শোম্বা’

ড. নাজমুল করিম

ভাষা সদা পরিবর্তনশীল। লেখার বিষয়বস্তুর শাব্দিক অর্থ হবে: আখেরি (আররি/ফারসি) অর্থ শেষ, চহর্ শামবেহ (ফারসি) ৪র্থ দিন (বুধবার)। আরবি ভাষায় বুধবারের নাম ৪র্থ দিন (ইয়াউম আল আরবা)।

আরবি ইয়াউম এবং ফারসি শামবেহ একই অর্থবোধক, সময় বা দিন।

আরবি এবং ফারসি ভাষায় ৭ দিনের নাম শেখার মতো এত সহজ কাজ পৃথিবীতে আছে কিনা জানি না। আরবিতে কেবল দুটি শব্দ শিখতে হয়: ১) সাবাত (শনিবার) এবং ২) জুমআ (শুক্রবার)।

বাকি ৫ দিনের কোনো নাম নেই, শুধু নং আছে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত।
১ম দিন: ইয়াউম আল আহাদ (রোববার)
২য় দিন: ইয়াউম আল ইসনিন ( সোমবার)
৩য় দিন: ইয়াউম আল তালাতা (মঙ্গলবার)
৪র্থ দিন: ইয়াউম আল আরবা’ (বুধবার)
৫ম দিন: ইয়াউম আল খামিস (বৃহস্পতিবার)।

ফারসি ভাষাতেও অনুরূপ দুইটি দিনের নাম শিখতে হয়: শামবেহ (শনিবার) এবং জুমে’ (শুক্রবার)। বাকি ৫ দিনের কোনো নাম নেই, শুধু নং আছে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত।

১ম দিন: এক শামবেহ (রোববার),
২য় দিন: দো শামবেহ ( সোমবার),
৩য় দিন: ছে শামবেহ (মঙ্গলবার),
৪র্থ দিন: চহর্ শামবেহ (বুধবার),
৫ম দিন: পান্জ্ শামবেহ (বৃহস্পতিবার)

তাহলে নিশ্চিত হওয়া গেল যে, আরবি ও ফারসি দুই ভাষাতেই শনিবারকে সাবাত এবং শামবেহ (অর্থাৎ নির্দিষ্ট বা কেন্দ্র) বলা হয়েছে। দিন গণনা তার পরদিন থেকে।

শনিবারের পবিত্রতার কথা পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে।

তোমরা তাদেরকে ভালোরূপে জেনেছো, যারা শনিবারের (সাবাত) বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করেছিল। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, ‘তোমরা নিকৃষ্ট বানরে পরিণত হয়ে যাও।’
– সুরা বাকারা: আয়াত ৬৫

আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত এমন ভয়াবহ সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে শনিবারের ইবাদত বন্দেগি একদিন এগিয়ে গিয়ে শুক্রবারে স্থান করে নিল, তা আমার মাথায় আসে না।

ফারসি চহর্ শামবেহ অর্থ বুধবার। সেটি বিকৃত হয়ে ‘চাহার শোম্বা’ হয়েছে। অবশ্য ইরানি কর্তৃপক্ষ ফারসি ভাষার প্রচার এবং প্রসারের জন্য বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে থাকে। তবে তা খুব বেশি কাজে লাগে বলে মনে হয় না।

অবশ্য এটাও জেনে রাখা ভালো যে, ভারতীয় উপমহাদেশে ‘ইসলাম’ ধর্মের প্রচার হয়েছে ইরানিদের মাধ্যমে। এ জন্যই ‘নামাজ’ ‘রোজার’ মতো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফারসি শব্দগুলো এত শতাব্দী পরেও আরবি ভাষায় (সালাহ-সিয়াম) ব্যবহৃত হয় না।

ইরানিদের প্রচারিত শিয়া ‘ইসলামের’ সঙ্গে ঢুকে গেছে হাজার হাজার মাজার, লাখ লাখ পিরের সংস্কৃতি।

আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে লিখতে বাধ্য হলাম। যখন দেখলাম তথ্যকোষ উইকিপিডিয়াতেও আখেরি চহর্ শামবেহ সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই, বরং সেখানে চকচক করছে আখেরি চাহার শোম্বা।

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার গল্প শুনেছি অনেক, নিজেরও কম নাই তারপরও সেই পুরাতন কবিতার লাইনগুলো লিখে দিলাম:

শাক, সর্প, ব্যকরণ …
তিন কিল খেলাম অকারণ
যদি বলি লবণ …
যাবে আমার জীবন।

তারপরও বলে যাবো, লিখে যাব সত্য।  সত্য বলতেই হবে। সেই সত্য হলো ‘আখেরি চাহর শামবেহ।’

সারাবাংলা/একে

Scroll to Top