ধনী দেশগুলোর ভিসায় কঠোরতা, অভিবাসন কমার আসল কারণ কী? | চ্যানেল আই অনলাইন

ধনী দেশগুলোর ভিসায় কঠোরতা, অভিবাসন কমার আসল কারণ কী? | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

ধনী দেশগুলোর ভিসায় কঠোরতা বাড়ার সাথে সাথে শ্রম-ভিত্তিক অভিবাসন উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ধনীর দেশগুলোতে স্থায়ী শ্রম অভিবাসনের সংখ্যা প্রায় ২১ শতাংশ কমে ৯ লাখ ৩৪ হাজারে নেমেছে।

আজ ১ ডিসেম্বর সোমবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানিয়েছে, এর পেছনের মূল কারণ হিসেবে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ভিসা নীতি কঠোরতা এবং নির্দিষ্ট দেশগুলোর বাজারে শ্রমের চাহিদার পরিবর্তনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

ভিসা নীতি ও নিয়ন্ত্রণের প্রভাব

সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ভিসা নীতি কঠোর করার কারণে এক বছরে নেট অভিবাসন ৪০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। পাশাপাশি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোও শ্রম অভিবাসন সীমিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ইউক্রেন থেকে আসা অস্থায়ী শরণার্থী শ্রমিকদের কারণে কিছু ক্ষেত্রে শ্রমের ঘাটতি কমেছে। ওইসিডি-এর অনুমান অনুযায়ী, রাশিয়ার আক্রমণের পর ২০২২ সালে ইউক্রেন ত্যাগ করা প্রায় ৫ দশমিক ১ মিলিয়ন মানুষ এখন ওইসিডি দেশে বসবাস করছে।

অন্য ধরনের অভিবাসনের ধারা

শিক্ষার্থী অভিবাসনও কমেছে। ওইসিডি-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় ভিসা কঠোরকরণের প্রভাব এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে। তবে মানবিক অভিবাসন ও আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসনের শেষ মাসগুলোতে আশ্রয় আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় অবৈধ আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শ্রম ও শিক্ষাগত অভিবাসনের পতনের পরও ২০২৪ সালে মোট স্থায়ী অভিবাসন মাত্র ৪ শতাংশ কমেছে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

গোল্ডম্যান স্যাকসের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালে অভিবাসন কানাডা, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি প্রায় ৪ মিলিয়ন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।বিশ্লেষকরা মনে করেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ঠিক হলে শ্রম অভিবাসন আবার বাড়তে পারে। ওইসিডি-এর জ্যাঁ-ক্রিস্টোফ ডুমন্ট বলেন, মোট অভিবাসন কিছুটা কমতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে এখনও উচ্চ স্তরে থাকবে। যুক্তরাজ্যে বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান হার প্রায় ৭৬ শতাংশ, যা দেশীয় শ্রমিকদের চেয়ে সামান্য বেশি।

কেন কমছে অভিবাসন?

  • অর্থনৈতিক মন্দা: আইএমএফ পূর্বাভাস হ্রাস করেছে এবং গ্লোবাল বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে।
  • ভিসা কঠোরতা: যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন নীতি কঠোর।
  • শরণার্থী শ্রমিকদের প্রভাব: ইউক্রেনীয়রা কিছু খাতের ঘাটতি পূরণ করছে।
  • নিম্ন-দক্ষ শ্রমের প্রভাব: স্থানীয় নাগরিকরা এই চাকরিগুলো নিতে আগ্রহী নয়, ফলে অভিবাসন প্রয়োজনীয়তা কমেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ফ্যাবিওলা মিয়েরেস বলেন, কৃষি, নির্মাণ ও স্বাস্থ্য খাতে অভিবাসীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে ন্যূনতম মজুরি এবং কাজের শর্তও গুরুত্বপূর্ণ। অভিবাসন বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকবে, বিশেষ করে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

তবে শ্রম অভিবাসন কমলেও, সামগ্রিকভাবে ওইসিডি দেশে অভিবাসন এখনও প্রাক-মহামারী স্তরের ওপরে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক চাপ এবং সামাজিক চাহিদা মিলিয়ে অভিবাসন এখন এক জটিল, বহুস্তরীয় প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

Scroll to Top