ভারতে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে বিতর্ক

ভারতে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে বিতর্ক

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

ভারতের আসাম রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির একটি জেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’। এই ঘটনায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি তীব্র সমালোচনা করেছে। তবে অনেকেই বলছেন, এই ঘটনায় বিতর্কের কিছু নেই, কারণ গানটি মূলত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয় অনেক পরে।

২৯ অক্টোবর (বুধবার) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, বিজেপির আসাম শাখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ পোস্ট দিয়ে কংগ্রেসকে ‘বাংলাদেশ-আসক্ত দল’ বলে অভিহিত করে দলটি লিখেছে, বাংলাদেশ কয়েক দিন আগেই এমন একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এখন কংগ্রেস আসামেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইছে—এতে তাদের গোপন এজেন্ডা স্পষ্ট।

আসামের মন্ত্রী অশোক সিংঘলও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, আসামের শ্রীভূমি এলাকায় কংগ্রেস সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়েছে—যে দেশটি উত্তর-পূর্ব ভারতকে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়! এ থেকেই বোঝা যায়, কংগ্রেস কীভাবে বছরের পর বছর অবৈধ অভিবাসনকে উৎসাহ দিয়ে রাজ্যের জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট করেছে-শুধু ভোটের রাজনীতির জন্য।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপির এই সমালোচনা বাস্তবতাবিবর্জিত। ‘আমার সোনার বাংলা’ কবিতা ও গানটি রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে, ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। গানটি বাংলার প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক, যা কোনো নির্দিষ্ট দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে না। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত বাতিল হওয়ার অনেক পরে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই গানটিকেই জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তাই গানটি গাওয়া মানে বাংলাদেশকে সমর্থন করা নয়, বরং বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানানো।

উল্লেখ্য, আসামের শ্রীভূমি (পূর্বে করিমগঞ্জ) জেলা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বারাক উপত্যকায় অবস্থিত, যেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। ফলে স্থানীয় কংগ্রেস সভায় ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন অনেকে। তবুও বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।

Scroll to Top