রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পর দেশটি ন্যাটোর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের জরুরি পরামর্শ চেয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনটি রুশ মিজি-৩১ যুদ্ধবিমান কোনো অনুমতি ছাড়াই ফিনল্যান্ড উপসাগরের ওপর দিয়ে এস্তোনিয়ার আকাশে প্রবেশ করে এবং সেখানে প্রায় ১২ মিনিট অবস্থান করে।
রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডকে দায়িত্বহীন ও উসকানিমূলক বলে অভিহিত করেছে ন্যাটো। ইতালি, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন থেকে ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে যুদ্ধবিমান উড়ে এসে ওই রুশ বিমানগুলোকে বাধা দেয়।
এস্তোনিয়ার এই পরামর্শ চাওয়ার পদক্ষেপটি ন্যাটো চুক্তির ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যার মাধ্যমে ৩২ সদস্য বিশিষ্ট জোটের মধ্যে দ্রুত ও আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়। এটি চলতি মাসে দ্বিতীয়বার, এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড একই অনুরোধ করেছিল।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টেন মিখাল বলেন, ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়া উচিত। আমাদের পরবর্তী যৌথ পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করা জরুরি।
রাশিয়া অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের বিমানগুলো একটি নির্ধারিত মিশনের অংশ ছিল এবং তারা আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই নিরপেক্ষ বাল্টিক জলের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে, যা এস্তোনিয়ার সীমান্ত থেকে অন্তত ৩ কিমি দূরে ছিল।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আকাশসীমা লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তবে এস্তোনিয়ার দাবি অনুযায়ী, এটাই চলতি বছরে পঞ্চমবার রাশিয়ার এ ধরনের আকাশসীমা লঙ্ঘন।
সরকারের বিবরণে বলা হয়, রুশ যুদ্ধবিমানগুলো উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবেশ করে। ফিনল্যান্ডের জেট প্রথমে এগুলোকে বাধা দেয় এবং পরে এস্তোনিয়ায় মোতায়েনকৃত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানগুলো ন্যাটোর বাল্টিক এয়ার প্যাট্রোলিং মিশনের আওতায় বিমানগুলোকে এস্কর্ট করে বের করে দেয়।
রুশ বিমানে কোনো ফ্লাইট প্ল্যান ছিল না, ট্রান্সপন্ডার বন্ধ ছিল এবং তারা এস্তোনিয়ান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি বলেও জানানো হয়েছে।
এই ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমার ভালো লাগেনি। এটা খুব খারাপ একটা ঘটনা। বড় ঝামেলা হতে পারে।
এই ঘটনার এক সপ্তাহ আগে, পোল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানায়, তারা কমপক্ষে তিনটি রুশ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক জানান, রাশিয়ার মোট ১৯টি ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।
রাশিয়া অবশ্য দাবি করেছে, এসব অনুপ্রবেশ পরিকল্পিত নয়। বেলারুশ বলেছে, ড্রোনগুলোর নেভিগেশন সিস্টেম জ্যাম হয়ে গিয়েছিল।
এদিকে, রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সীমান্তে রাশিয়ার একটি ড্রোন ধরা পড়ে, যা পরে রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
রাশিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের পর ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে বিমান ও সেনা মোতায়েন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ডেনমার্ক ইতোমধ্যে পোল্যান্ডের আকাশ প্রতিরক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগুস চাহকনা বলেন, রাশিয়া খুব ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়িয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যাতে প্রতিটি ঘটনা আলাদাভাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া দাবি না করলেও সামগ্রিকভাবে ন্যাটোর সুরক্ষাব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছে।
সাবেক ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার বেন ওয়ালেস ন্যাটোকে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।