এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
এই গ্রীষ্মে ইউরোপের শহরগুলোতে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রার কারণে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষণায় এই দাবি করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি দহনজনিত কার্বন নিঃসরণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইউরোপজুড়ে তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়েছে, আর এই উষ্ণতা গ্রীষ্মকালে প্রাণহানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ব্রিটেনভিত্তিক গবেষক দলের পরিচালিত এই দ্রুত-উৎপাদিত গবেষণাটি, অফিসিয়াল পরিসংখ্যান প্রকাশের আগেই, মডেলিংয়ের মাধ্যমে অনুমান করে দেখিয়েছে ২০২৫ সালের জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ইউরোপের ৮৫৪টি শহরে গড় তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।
গবেষণায় বলা হয়, এই সময়কালে শহরগুলোতে আনুমানিক ২৪ হাজার ৪০০ অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
তাপদাহে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা প্রায়ই ছোট করে দেখা হয়, কারণ হাসপাতালগুলোর ডেথ সার্টিফিকেটে সাধারণত হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য রোগকেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয় যেগুলোর প্রকোপ বৃদ্ধিপায় গরমে, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে।
গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে যদি পৃথিবী মানবসৃষ্ট কার্বন নিঃসরণে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ না হতো, তবে এত মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকত না।
এই গবেষণার অন্যতম গবেষক ফ্রিডেরিকে অটো এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, এই মুহূর্তে প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া অসম্ভব, তবে আমাদের মডেলিং যথাযথ বলে মনে করছি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, ইউরোপের কিছু শহরে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। যাদের মধ্যে রোমে ৮৩৫ জন, আথেন্সে ৬৩০ জন, প্যারিসে ৪০৯ জন। এই মৃত্যুর ৮৫ শতাংশের বেশি মানুষ ছিলেন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী।
তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, ইউরোপের সব অঞ্চল বিশেষ করে বলকান অঞ্চলের অনেক দেশ এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সুতরাং এটি পুরো ইউরোপের চিত্র তুলে ধরে না।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন। আগে তারা জুন মাসের শেষদিকে একটি নির্দিষ্ট ইউরোপীয় তাপপ্রবাহ নিয়েও অনুরূপ গবেষণা করেছিলেন।
বিখ্যাত আবহাওয়াবিদ অক্ষয় দেওরাস বলেন, এই ধরনের গবেষণায় ব্যবহার হওয়া পদ্ধতিগুলো বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও বরং রক্ষণশীল বাস্তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
গবেষণা আরও বলছে, তাপপ্রবাহের মাত্র ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিই হাজার হাজার মানুষের জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
এই গ্রীষ্ম ছিল ইউরোপের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ উষ্ণতম।




