মাশরুম খাইয়ে তিনজনকে হত্যা, এক নারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড | চ্যানেল আই অনলাইন

মাশরুম খাইয়ে তিনজনকে হত্যা, এক নারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড | চ্যানেল আই অনলাইন

অস্ট্রেলিয়ায় বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুম খাইয়ে তিনজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এরিন প্যাটারসন নামে এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে মেলবোর্নের সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ে বলা হয়েছে, সাজা চলাকালীন ৩৩ বছর পর্যন্ত তিনি প্যারোলের সুযোগ পাবেন না।

৫০ বছর বয়সী এরিন প্যাটারসন তার তিন জন আত্মীয়কে হত্যা এবং আরও একজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

দুই সন্তানের মা এরিন তার বাড়িতে বিফ ওয়েলিংটন নামে একটি খাবার রান্না করে অতিথিদের পরিবেশন করেছিলেন।

পরে দেখা যায়, সেখানে ছিল বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুম। ঘটনাটি ঘটেছিল দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই দুপুরের খাবার বা লাঞ্চের টেবিলে।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আদালতে শুনানি চলাকালে প্যাটারসন বেশিরভাগ সময় চোখ বন্ধ রেখেছিলেন। শুধুমাত্র রায় যখন ঘোষণা করা হয় তখন চোখ খুলেছিলেন তিনি।

যেমন ছিল আদালতের পরিবেশ
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রায় ঘিরে সোমবার মেলবোর্ন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের ওই কক্ষটিতে অনেক ভিড় লক্ষ করা গেছে। গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য রাখা বেঞ্চটি পরিপূর্ণ ছিল। আর সাধারণ মানুষদের জন্য বসার বেঞ্চগুলোতেও অনেক মানুষের ভিড় ছিল।

আদালতে রায় শুনতে যারা এসেছিলেন, তারাও তাকাচ্ছিলেন প্যাটারসনের দিকে। কাঠগড়ায় প্যাটারসনের মাথার উপরের অংশ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছিল না।

আদালতে যখন রায় ঘোষণা করা হয়, তখন বেশিরভাগ সময় চোখ বন্ধ রেখেছিলেন এরিন প্যাটারসন। তার বিরুদ্ধে যখন পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য পড়ে শুনানো হচ্ছিল তখনও তিনি ছিলেন নির্বিকার। রায় ঘোষণা শেষে যখন আদালতের কাঠগড়া ধীর পায়ে হেটে বের হচ্ছিলেন প্যাটারসন।

যখন বিচারক প্যাটারসনের অপরাধের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন তা নোট করছিলেন সাংবাদিকরা।

রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি প্যাটারসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপনি আপনার দোষ আড়াল করার জন্য এক জটিল কৌশল নিয়েছিলেন এবং এটি ছিল ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা।’’

বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। ঘটনাটিকে আড়াল করতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন প্যাটারসন। তিনি মিথ্যা বলেছিলেন, বিষাক্ত মাশরুম সংগ্রহ করার বিষয় অস্বীকার করেছিলেন, খাবারের প্লেট ফেলে দিয়েছিলেন এবং পুলিশের কাছে অনেক বিষয়ে মিথ্যা বলেছিলেন।’’

আলোচিত সেই মাশরুম লাঞ্চের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র অতিথি ইয়ান উইলকিনসন সোমবার আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, তার আবেদন এইটুকুই সবাই যেন ঘটনাটিকে ঘিরে দয়া এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন করে।

বাকী জীবন থাকতে হবে জেলে
অনেকদিন ধরে জেলে আছেন এরিন প্যাটারসন। আদালতের রায় অনুযায়ী তার জীবনের বাকি সময় জেলে কাটাতে হবে। তিনি প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা সেলে কাটাচ্ছেন, খাবার ও ওষুধ দরজার ফাঁক দিয়ে দেওয়া হয়। ব্যায়াম ও একটু খোলা বাতাস নেওয়ার জন্য ছোট একটি কনক্রিটের মাঠও রয়েছে।

সেখান থেকে অন্য বন্দির সঙ্গে তারের বেড়ার ফাঁকা দিয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। সপ্তাহে দুই বার ২০ মিনিটের জন্য কারাগারের লাইব্রেরি ব্যবহার করা যায়।

রায়ে বলা হয়, আগে জাতিসংঘ নির্দেশনা মেনে কোন বন্দিকে ১৫ দিনের বেশি আলাদা সেলে রাখা উচিত নয়। কিন্তু প্যাটারসন ইতিমধ্যেই ১৫ মাস ধরে এমন অবস্থায় ছিলেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবীর দাবি, এরিন ইচ্ছাকৃতভাবে ওই বিষাক্ত মাশরুম খাবারে মিশিয়েছিলেন। বাদীপক্ষ আদালতে তাদের আবেদনে প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আবেদন করেছিলেন।

কিন্তু শুনানি শেষে সোমবারের রায়ে আদালত যাবজ্জীবনের পাশাপাশি প্যারোলের সুযোগ রেখেছে। বলা হয়েছে এই প্যারোল তিনি পাবেন ৩৩ বছর পর।

রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘আপনার নিরাপত্তার স্বার্থে আপনাকে হয়তো বছরের পর বছর একক সেলে রাখা হবে।’’

বাদীপক্ষ থেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন এরিনেরই আত্নীয় ইয়ান উইলকিনসন। তিনি রায় ঘোষণার পর সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একই সাথে তিনি তার পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষারও দাবি জানান।

উইলকিনসন পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘তিনজন ভালো মানুষের সঙ্গে কী ঘটেছিল, তার সত্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।’’

Scroll to Top