দেশের ওষুধ শিল্পে সংকট ও ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (১৩ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প দেশের অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় শতভাগ পূরণ এবং একই সাথে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ খাত আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে। বাংলাদেশে তৈরি মানসম্পন্ন ঔষধ এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৬০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়। আবার এই শিল্পখাত এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডেন্ট) উৎপাদনেও বিশেষ সক্ষমতা অর্জনের পথে এগিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বিগত দিনে বিএনপির শাসনামলে দেশের স্বার্থে এই খাতের উন্নয়নে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৯৪ সালে ঔষধের প্রাইসিং পলিসি প্রণয়ন, ২০০২ সালে জাতীয় ঔষধ নীতি হালনাগাদ, ২০০৩ সালে ঔষধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শক্তিশালীকরণ, ট্রিপস ছাড়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাশ্রয়ী জেনেরিক ওষুধ উৎপাদন, নতুন ঔষধ নিবন্ধন, রপ্তানি প্রণোদনা প্রদান এবং গবেষণা ও দক্ষ জনবল তৈরিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এগুলো ছিল উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এসব উদ্যোগ বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের সাফল্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সম্ভাবনাময় এই শিল্পখাতে সরকার কর্তৃক গৃহীত কিছু অস্বচ্ছ, একপেশে নীতিকৌশল ও নির্দেশনা এবং একই সাথে কিছু বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা এই খাত ঘিরে বিশেষ ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে আমরা লক্ষ্য করছি। বিশেষ করে সম্প্রতি সরকার কর্তৃক গঠিত ঔষধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিসিসি), অত্যাবশ্যকীয় ঔষধের তালিকা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি, ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির (ডিসিসি) টেকনিক্যাল সাব কমিটিতে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির কোনো প্রতিনিধি না রাখা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিএনপি বিশ্বাস করে ঔষধ শিল্পের নীতি প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পেশাজীবীদের মতামত প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি ও শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে যৌথভাবে সমাধান খুঁজে বের করাই হবে দেশের স্বার্থে শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ। আমরা কোনোভাবেই শিল্প উদ্যোক্তাদের বাদ রেখে কোনো কমিটি গঠন, প্রণয়ন, পরিবর্তন সমর্থন করি না। সামনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই খাতের সুরক্ষায় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
আমরা আরও একটি বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়েছি যে গত প্রায় দুই বছর যাবৎ নতুন কোনো ঔষধের নিবন্ধন দেওয়া হয়নি এবং একই সাথে বিগত অনেক দিন যাবৎ ঔষধের মূল্য সমন্বয়ও করা হয়নি। আবার নতুন ঔষধের নিবন্ধন না দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ ট্রিপস ওয়েভার হারাতে বসেছে। কেননা ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। এমতাবস্থায় নতুন ঔষধের নিবন্ধনা দ্রুততম সময়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আজ আর শুধুমাত্র একটি উৎপাদন খাত নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই খাতের সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি।
আমরা বিশ্বাস করি সরকার, বেসরকারি খাত, ঔষধ শিল্প খাতের উদ্যেক্তা, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সমন্বিত সহযোগিতায় দেশের ঔষধ শিল্পখাতকে টেকসই উন্নয়নের পথে আরও এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
বিএনপি আশা করে কার্যকর সব পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে দেশের ঔষধ শিল্পের স্থিতিশীলতা ও সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে সরকার এই খাতের উদ্যোক্তাদের সাথে আলোচনা করে শিল্পবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণে এগিয়ে আসবে।”