কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপট: ভবিষ্যতের কোন পেশাগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে? | চ্যানেল আই অনলাইন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপট: ভবিষ্যতের কোন পেশাগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে? | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

কিছুদিন আগেও যা ছিল সায়েন্স ফিকশনের বিষয়, আজ তা আমাদের হাতের মুঠোয়। চ্যাটজিপিটি, জ্যামিনি, মিডজার্নি -এর মতো টুলগুলো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষও এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের শক্তি পরখ করে দেখছে। এই প্রযুক্তির উত্থান একদিকে যেমন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে, তেমনই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের শ্রমবাজারে তৈরি করছে এক বিরাট প্রশ্ন— এআই কি আমাদের চাকরি কেড়ে নেবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয় পাওয়ার কারণ নেই, তবে সতর্ক হওয়ার এবং নিজেদের প্রস্তুত করার সময় এখনই। মূলত, যেসব কাজে পুনরাবৃত্তি এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ডেটা নিয়ে কাজ করতে হয়, সেসব পেশাই এআই-এর কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। অন্যদিকে, যেসব কাজে সৃজনশীলতা, কৌশলগত চিন্তাভাবনা এবং জটিল সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন, সেগুলোর চাহিদা আরও বাড়বে।

যেসব পেশা থাকবে ঝুঁকির শীর্ষে
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু জনপ্রিয় পেশা আগামী দশকে এআই-এর কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

১. ডেটা এন্ট্রি এবং অফিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন: বিপুল পরিমাণ ডেটা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কপি করা বা নির্দিষ্ট ফরম্যাটে সাজানোর কাজগুলো এখন AI সফটওয়্যার দিয়ে খুব সহজেই এবং নির্ভুলভাবে করা সম্ভব। ফলে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, অফিস ক্লার্ক এবং প্রশাসনিক সহকারীর মতো পদের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসতে পারে।

২. কাস্টমার সার্ভিস ও কল সেন্টার: গ্রাহকদের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বা রুটিন সমস্যা সমাধানের জন্য এখন উন্নত চ্যাটবট এবং AI ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট অনেক বেশি কার্যকর। বাংলাদেশের বিকাশমান বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং সেক্টরের প্রাথমিক স্তরের কাজগুলো এর ফলে ঝুঁকিতে পড়বে।

৩. বেসিক গ্রাফিক ডিজাইন: সাধারণ লোগো, সামাজিক মাধ্যমের জন্য টেমপ্লেট-ভিত্তিক পোস্ট বা সাদামাটা ব্যানার তৈরির কাজ এআই টুলস দিয়ে এখন কয়েক মিনিটেই করা যায়। ফলে যেসব ডিজাইনার শুধু এই ধরনের রুটিন কাজ করেন, তাদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হবে।

৪. কনটেন্ট রাইটিং এবং অনুবাদ: পণ্য বা সেবার বিবরণ লেখা, সাধারণ মানের ব্লগ পোস্ট তৈরি করা বা এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় আক্ষরিক অনুবাদ করার কাজগুলো এআই খুব দ্রুততার সাথে করতে পারে। এতে মৌলিক এবং বিশ্লেষণধর্মী লেখার কদর বাড়লেও রুটিন লেখকদের কাজের সুযোগ কমবে।

৫. অ্যাকাউন্টিং ও বুককিপিং: লেনদেনের হিসাব রাখা, বেতনের হিসাব করা এবং সাধারণ আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির মতো কাজগুলো অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার এবং এআই-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা বুককিপারের মতো পদের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে।

৬. টেলিমার্কেটিং: নির্দিষ্ট স্ক্রিপ্ট অনুসরণ করে পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য ফোন কল করার কাজটি AI সহজেই করতে পারে। মানুষের চেয়ে এআই এখন আরও দক্ষতার সাথে গ্রাহকদের তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম।

ঝুঁকি কম কাদের এবং কেন?
এই পরিবর্তনের যুগে তারাই এগিয়ে থাকবে, যাদের কাজে মানবিক স্পর্শ, সৃজনশীলতা এবং কৌশলগত দক্ষতার প্রয়োজন। যেমন:

  • জটিল সমস্যা সমাধানকারী: বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং গবেষকদের চাহিদা বাড়বে, কারণ তাদের কাজে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করতে হয়।
  • সৃজনশীল ও কৌশলগত পেশা: মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিস্ট, ব্র্যান্ড ম্যানেজার, স্থপতি, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মতো পেশায় মানুষের সৃজনশীলতা ও কৌশলগত চিন্তার কোনো বিকল্প নেই।
  • স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষকতা: ডাক্তার, নার্স, মনোবিজ্ঞানী এবং দক্ষ শিক্ষকদের চাহিদা সবসময়ই থাকবে। কারণ এসব পেশায় সহানুভূতি এবং মানবিক যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম।
  • এআই বিশেষজ্ঞ এবং ডেভেলপার: যারা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম তৈরি, পরিচালনা এবং এর নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করবেন, তাদের চাহিদা হবে আকাশচুম্বী।সাইবার সিকিউরিটি, ডিপফেক ডিটেকশন, মেশিন লার্নিং এবং ব্লকচেইন-এর মতো বিষয়ে দক্ষ পেশাজীবীরাই হবেন ভবিষ্যতের চাকরির বাজারের মূল চালিকাশক্তি তাদের কাজ হবে এআই -এর কারণে তৈরি হওয়া নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা

    তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এআই আমাদের প্রতিযোগী নয়, সহযোগী। যে কাজগুলো করতে আমাদের একঘেয়েমি লাগে, সেগুলো এআই-কে দিয়ে আমরা আরও জটিল এবং সৃজনশীল কাজে মনোযোগ দিতে পারব।”

সুতরাং, এআই নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং নিজেদের নতুন দক্ষতার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার সময় এসেছে। নতুন প্রযুক্তি শেখা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার  বিকাশ এবং সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দেওয়াই হবে এই যুগে টিকে থাকার মূলমন্ত্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোনো হুমকি নয়, বরং একটি নতুন যুগের সূচনা। এই যুগে টিকে থাকতে হলে আমাদেরও নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

Scroll to Top