নাটকের বাবাদের আনন্দ দিন – আনন্দ আলো

নাটকের বাবাদের আনন্দ দিন – আনন্দ আলো

নাটকের বাবাদের আনন্দ দিন, আনন্দ করবেন, যখন খুশি এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াবেন। এজন্য অনেকে বয়সের দোহাই দেন। বয়স হয়েছেরে ভাই। আর পারিনা। তারা ভুল বলেন। আসলে বয়স কোনো ফ্যাক্টর নয়। বয়স একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। যদি থাকে ইচ্ছে শক্তি, অটুট মনোবল তাহলে যে কোনো বয়সেই মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। কথায় আছে ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মোলিয়া, ঘরের বাইরে দুই পা ফেলিয়া’। এক ঘেয়েমি জীবনে একটু পরিবর্তন আনার জন্য ভ্রমণ বেশ ভালো টনিক। ব্যস্ত জীবন। শুধুই কাজ আর কাজ। এর ফলে শরীর, মন দুটোই অবসন্ন হয়। এই সংকট দূর করতে আপনার উচিৎ একদিনের জন্য হলেও কোথাও বেরিয়ে আসা। একা নয়। সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে নিন। বয়সের বাউন্ডারি ভুলে যান। যা করতে মন চায় তাই করুন। দেখবেন শরীর ও মন দুটোই চাঙ্গা হবে। কাজে গতি ফিরে পাবেন। অনেকে হয়তো ওই ব্যস্ততার কথাই বলবেন। তাদের উদ্দেশ্যে পাঁচ বন্ধুর দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চাই। পাঁচজনই দেশের টিভি নাটকের বেশ ব্যস্ত তারকা। আব্দুল্লাহ বানা, জুলফিকার চঞ্চল, মোশাররফ হোসেন খান রকি, হারুন রশিদ বান্টি ও এম কে এইচ পামির। টিভি নাটকে মূলত: বাবা, চাচা, খালু, ফুফাদের চরিত্রেই অভিনয় করেন। তাদের সিডিউল পাওয়া সহজ নয়। অথচ কাজ ফেলে তারা পাঁচ বন্ধু এক সঙ্গে ঘুরে বেড়ালেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বন্ধুদের অনেকে তাদের নাম দিয়েছে বুড়ো খোকার দল। কীভাবে সম্ভব হলো এই যৌথ ভ্রমণ বিলাস। আসুন বুড়ো খোকা আব্দুল্লাহ রানার মুখেই গল্পটা শুনি…
আমরা যারা টিভি নাটকে বাবার চরিত্রে অভিনয় করি তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা গ্রুপ খুলেছি। এই গ্রুপের সদস্য ৫০। সবাই টিভি নাটকে মূলত: বাবার চরিত্রে অভিনয় করে। পারস্পারিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্রুপটি খোলা হয়। এর পেছনে একটা ইতিহাস আছে। আমাদের বন্ধু জুলফিকার চঞ্চলকে হঠাৎ কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনা কী? সে গেল কোথায়। হঠাৎ একদিন তার দেখা পেলাম। শরীর সুখিয়ে কাঠ হয়েছে। ৯৮ কেজি ওজন ৪৩ এ নেমে এসেছে। প্রায় ৪০দিন অসুস্থ ছিল জুলফিকার। একটা অপরাধবোধ কাজ করলো। কেউ কারও খোঁজ রাখি না এটা কেমন কথা? নিজেদের মধ্যে অর্থাৎ টিভি নাটকে আমরা যারা বাবার চরিত্রে অভিনয় করি তাদের জন্য একটা হোয়াটসআপ গ্রুপ খোলা হল। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় ৫০ জন। সবাই টিভি নাটকে বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন। আমাদের মধ্যে যোগাযোগ বেড়ে গেল। একদিন মনে হলো টিভি নাটকের বাবারা এক সঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়? গ্রুপে ঘোষনা দেওয়া হল। ৫০ জনের মধ্যে ৫ জনের সম্মতি মিলল। অন্যরা নাটকে অভিনয়ের ব্যস্ততা, পারিবারিক কারণে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারলো না। আমরা ৫ জনই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া। ৫ বন্ধু বেশ মজা করলাম। নিজেদের মধ্যে একটা বন্ডিং তৈরি হলো।
এবার দ্বিতীয় বারের মতো ঘুরে এলাম চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে। দারুণ একটা অনুভূতি। অভিনেতা হিসেবে সাধারন মানুষ যে আমাদেরকে কতটা ভালোবাসে তা আবার অনুভব করলাম। অনেকে তাদের বাসায় জোর করে নিয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে আমরা ৫ বন্ধু যেন তাদের এলাকা থেকে একবার বেরিয়ে আসি। আমাদের ৫ বন্ধুর মধ্যে একটা বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আমরা ফেসবুকে পরস্পরের খোঁজ েেনই। কার কোথায় স্যুটিং আছে জানা হয়ে যায়। স্যুটিং না থাকলে কোথাও আড্ডায় বসে যাই। আমাদের সবার পরিবার এব্যাপারে বেশ সহযোগিতা করে। আমাদের কোনো কাজে বাধা দেয় না বলে আমরা আনন্দের সঙ্গে কাজ গুলো করতে পারি।
আমরা ৫ বন্ধু গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাপারে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য নাটকের সব বাবাই নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পায় না। আমরা পরিচালক প্রযোজকদের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে কথা বলেছি। সব বাবাই যেন নাটকে কাজ পায় এই চেষ্টা করছি আমরা।
আব্দুল্লাহ রানা বলেন, আমরা যারা ৫০ বছর ক্রস করেছি তাদের জীবনটা আসলেই অন্যরকম। পরিবারেও তাদের অনেকের মূল্য নাই। ফলে অনেকের মধ্যে হতাশা কাজ করে। আমাদের ৫ বন্ধুর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অন্যরাও সংগঠিত হতে পারেন। এজন্য ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট।
নাটকের বাবাদের গ্রুপে ৫ বন্ধু ছাড়া আরও যারা গ্রুপে যুক্ত আছেন তারা হলেন, আনোয়ার শাহী, কাজি রাজু, সায়েম সামাদ, মাসুদ মহিউদ্দিন, আযম খান, হিন্দোল রায়, জাহাঙ্গীর আল মুক্তা, জিলানী, ম. আ. সালাম, সমু চৌধুরী, মারুফ মিঠু, মুকুল সিরাজ, নাসির উদ্দিন ভুইয়া, সাইফুল বাবু, সৈকত সিদ্দিকী, শওকত হোসেন, শাহীন মৃধা, সিদ্দিক মাস্টার, আমানুল হক হেলাল, বৈদ্যনাথ সাহা, দেলোয়ার হোসেন দিলু, গাজী ফারুক, প্রানেশ চৌধুরী, হারুন রশীদ, মাসুদ হারুন, শিবা শানু সহ অনেকে।