ধানমণ্ডি থেকে বসিলা: ট্রাফিক পুলিশের 'মিশন ইম্পসিবল' সফল হওয়া | চ্যানেল আই অনলাইন

ধানমণ্ডি থেকে বসিলা: ট্রাফিক পুলিশের 'মিশন ইম্পসিবল' সফল হওয়া | চ্যানেল আই অনলাইন

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের আওতাধীন বসিলা এলাকার যানজট দীর্ঘদিন ছিল নাগরিক জীবনের দুঃস্বপ্ন। তবে সম্প্রতি ট্রাফিক পুলিশের একগুচ্ছ সুপরিকল্পিত ও সক্রিয় উদ্যোগে এলাকাটিতে এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন।

বেড়িবাঁধ সিগন্যাল বন্ধ, ইউটার্ন চালু, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং রাস্তা সংস্কারের সমন্বিত প্রয়াসে এখন যানজট প্রায় শূন্যের কোঠায়। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন প্রতিদিন লাখো পথচারী ও যানচালক।

ট্রাফিক পুলিশের মূল কৌশল ছিল বেড়িবাঁধ সিগন্যাল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া। এর পরিবর্তে ইউটার্ন ব্যবস্থা যা গাবতলী থেকে বাবুবাজারমুখী যানবাহন ময়ূরভিলা থেকে, আর বাবুবাজার থেকে গাবতলীমুখী যানবাহন লাউতলা থেকে ইউটার্ন নিচ্ছে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও বসিলার মধ্যে সরাসরি যান চলছে।

এছাড়াও সিএনজি/অটোরিকশা স্ট্যান্ড, বিভিন্ন বাস পরিবহনের স্ট্যান্ড ও রাস্তা দখলকারী শতাধিক অবৈধ দোকান সরিয়ে ফেলা হয়েছে, ফলে রাস্তা হয়েছে প্রশস্ত।

ডিপিডিসির খনন করা রাস্তা ইটের খোয়া ও রাবিশ দিয়ে ভরাট, উঁচু-নিচু রাস্তা লেভেলিং এবং বেড়িবাঁধ কালভার্ট রোড মেরামত করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর জোনের ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আসলাম সাগর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বেড়িবাঁধ সিগন্যাল বন্ধ করে ইউটার্ন চালু করায় যানজট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

পাশাপাশি বসিলা-গাবতলী-রায়েরবাজার সংযোগ সড়কে সিমেন্ট ব্লক দিয়ে অস্থায়ী মিড আইল্যান্ড তৈরি করা হয়েছে, যা লেন শৃঙ্খলা ফিরিয়েছে।

মোহাম্মদপুর জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সড়কে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে সকল ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে নিরলস কাজ করেছি।

এলাকার বাসিন্দারা যা বলছে

বসিলা এলাকায় বসবাসকারী বেসরকারি চাকরিজীবি মারুফ হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আগে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পার হতে আধাঘণ্টা লাগত। এখন গাড়ি একবারও থামে না। যানজট থেকে যে পরিমাণ ভোগান্তি কমেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।

বছর দুয়েক ধরে বসিলার লাবণীতে বসবাসকারী সোহেল মাহমুদ বলেন, কী যে একটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো, একটা সময় চিন্তা করেছিলাম এলাকা পরিবর্তন করব। এখন কিন্তু কোনো প্রকার দুর্ভোগ নেই। সহজেই যাতায়ত করতে পারছি।

কিন্তু বসিলার দিকে যেতে ইউটার্ন এর একটু সামনে হাতের বাম পাশে রাস্তা আটকিয়ে ইট বালির ব্যবসা করে। ওদেরকে উঠাতে পারলে আরো ভালো হবে। ওদের কারণে পাশের রাস্তা গুলোর এই অবস্থা।

সাফল্য মিলছে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কেও

তেজগাঁও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানায়, বাংলাদেশ আই হাসপাতালের সামনে ধানমণ্ডি ২৭ এর পশ্চিমে একটি বাম লেন তৈরি করা হয়েছে। ফলে বিরতিহীনভাবে ধানমণ্ডি ২৭ এর পূর্ব থেকে আসা যানবাহন বাম লেন ধরে সাত মসজিদ রোড হয়ে ইউটার্ন নিয়ে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে পারছে, তাদের কোন সিগন্যালে পড়ে থাকতে হচ্ছে না। ফলে আগে ৩টি সিগন্যালের প্রয়োজন হতো, এখন মাত্র ২টি সিগন্যালে যান চলাচল সম্পন্ন হচ্ছে।

এছাড়াও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সাত মসজিদ এবং উল্টোপথে যাতায়াত সহজ হয়েছে, যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

পুলিশের যে ভূমিকা

পুলিশের এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের নিবেদিত প্রয়াস।

পুলিশর চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার (এডিসি) তানিয়া সুলতানা বলেন: ভ্রাম্যমাণ দোকানদার ও হকারদের বারবার ফিরে আসা। ইজিবাইক ও সিএনজি চালকদের সাথে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ। পাশাপাশি সড়কে স্থায়ী কার্পেটিং না থাকায় ধুলো ও কাদার সমস্যা। এই বিষয়গুলো গুলো যদি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ বা অভিযান পরিচালনা করা যায় তাহলে যানজট প্রশমন হবে। গণমানুষের জীবন যাপন সহজ হবে।

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. রফিকুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: মোহাম্মদপুর, বসিলা ও ধানমণ্ডি ২৭ এর এই ‘যাদুকরী’ পরিবর্তন প্রমাণ করে, সদিচ্ছা, সমন্বিত পরিকল্পনা ও দৃঢ় পদক্ষেপ থাকলে সীমিত সরম্পদেও রাজধানীর যানজট প্রশমন সম্ভব। ট্রাফিক পুলিশের এই স্বতন্ত্র ও সৃজনশীল উদ্যোগ ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে এবং শহরের অন্যান্য যানজটপ্রবণ এলাকার জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল হয়ে উঠেছে।

তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য বেশ কিছু বিষয় জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন: সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সিটি করপোরেশনের এর মাধ্যমে স্থায়ী কার্পেটিং ও প্রকৃত মিড আইল্যান্ড, ইউটার্ন নির্মাণ করতে হবে। সিটি করপোরেশনের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও দখল রোধে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। এবং ট্রাফিক আইনের প্রতি সকলের সম্মান বৃদ্ধি করতে হবে।

Scroll to Top