চট্টগ্রামে আচরণবিধি মানছেন না বেশিরভাগ প্রার্থী : রিটার্নিং কর্মকর্তা

চট্টগ্রামে আচরণবিধি মানছেন না বেশিরভাগ প্রার্থী : রিটার্নিং কর্মকর্তা

সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে। এ ছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ‘আরেকটি সাজানো নির্বাচন: কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক ঝুঁকি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকেরা এসব কথা বলেন।

ওয়েবিনারের অন্যতম আলোচক সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন দাবি করেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ৬০ শতাংশ মানুষের আগ্রহ নেই। ভোটারদের একটা অংশ দোদুল্যমান অবস্থায়ও রয়েছে। তাই ৩০ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিতে আসবে না।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আরেকটি নির্বাচন দেখতে যাচ্ছে, যার ফলাফল আগের মতোই হবে। সেটা কতটুকু টেকসই হবে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কতটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিল বা ভোটারের উপস্থিতি দিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, তা বলা সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, ‘‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন যা হয়েছে, আমি এটাকে হাইব্রিড ডেমোক্রেটিক রিজিম বলতে পারি। কারণ, গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বহুদলের অংশগ্রহণের কথা বলা আছে। এবার সেই অংশগ্রহণমূলক দেখাতে সরকারি দল ‘ডামি’ প্রার্থী দিয়েছে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আমরা হাইব্রিড গণতন্ত্রের আবর্ত থেকে বের হতে পারছি না।’’

প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২০২২ সালের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা বিভাগে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা বলতে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এমন ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে প্রায়ই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়।

এ শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দল ও বিরোধী প্রার্থীদের ওপর সরকারের নিয়মিত চাপ থাকে। এই বিভাগে থাকা দেশগুলোর বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয়। সাংবাদিকদের হয়রানি ও চাপ দেওয়া হয়। দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, দুর্বল আইনের শাসন, দুর্বল নাগরিক সমাজ এই ধরনের শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কখনোই ছিল না। নির্বাচিত বা অনির্বাচিত সরকার কর্তৃত্ববাদী শাসন চালিয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থায় জবাবদিহি থাকে না। অন্যায় হতে থাকলেও তার প্রতিকার পাওয়া যায় না।

গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন না। সামাজিক সম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়কেও বোঝায় বলে উল্লেখ করেন তৌহিদ হোসেন।

একই সঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কর্তৃত্ববাদী শাসনের মেয়াদ দীর্ঘ হতে থাকলে বিভিন্ন সমস্যা মাথাচাড়া দিতে থাকে।

মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে বলে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না এটা বিশ্বাস করতে চাই। তবে দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যের অভাব নয়, বাজারে পণ্য আছে, কিছু মানুষ তা কিনতে পারছে না বা টিকে থাকার জন্য বাজেট কাটছাঁট করে চলতে বাধ্য হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিকেও বোঝায়। দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ রিজার্ভ কমে এসেছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ। সরকারের মেগা প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে, দুর্নীতির মাধ্যমে এই অতিরিক্ত টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘নেতৃত্বের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন রকম কথা বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যাই করবে তা তাদের স্বার্থেই করবে। দেশটি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে, তা বাংলাদেশের জনগণেরও চাওয়া। দেশের পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের আংশিক নিষেধাজ্ঞাও দেয়, তাতে এ খাতের নারী শ্রমিকের বেশির ভাগ চাকরি হারাবে। তখন দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।’

আলোচনায় নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো মুবাশ্বার হাসান বলেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতি নিপীড়ন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় এর প্রভাব পড়তে পারে।

মুবাশ্বার হাসান বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে নিরাপত্তা-জেলখানার ধারণক্ষমতা-বিরোধী দলের মানুষকে কোথায় রাখবে—এমন প্রশ্নগুলো সামনে আসত না।

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের সদস্য কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান ওয়েবিনারে সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বিএনপির ওপর যে নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে, তাতে নির্বাচন কমিশন টু–শব্দটি করেনি। নির্বাচনে ‘আমরা আর মামুরা’ ভোট দিলেও তা জাতীয় নির্বাচন হবে না।

ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার। সূচনা বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।

Scroll to Top