ডিরেক্টর যদি দক্ষ হয় তাহলে আর্টিস্ট এগুলো করতে সাহস পাবে না – আনন্দ আলো

ডিরেক্টর যদি দক্ষ হয় তাহলে আর্টিস্ট এগুলো করতে সাহস পাবে না – আনন্দ আলো

অভিনয় ও নির্মাণ মুন্সিয়ানা দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভালোবাসা পাওয়া ব্যক্তিত্ব শহিদুজ্জামান সেলিম। সিনেমা নাটকে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এই অভিনেতার ‘দেনা পাওনা’ নামে একটি সিরিয়াল দর্শক নন্দিত হচ্ছে, সেখানে শহিদুজ্জামান সেলিম একজন মধ্যবিত্ত শিক্ষক ও পরিবারের কর্তার চরিত্রে অভিনয় করছেন। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ফরিদুর রেজা সাগর ও আফজাল হোসেনের যৌথ প্রয়াসে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা গোয়েন্দা সিরিজ ছোটকাকুতেও এবার অভিনয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি শহিদুজ্জামান সেলিম সম্প্রতি নাট্যনির্মাতাদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস ডিল্ড’-এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। জনপ্রিয় এই নাট্য ব্যক্তিত্ব আনন্দ আলো-এর সঙ্গে তার সার্বিক কাজকর্ম নিয়ে কথা বলেছেন, লিখেছেন নাহিয়ান ইমন

প্রশ্ন: ডিরেক্টিরস গিল্ডের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অনুভূতি কেমন?
উত্তর: প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আমি এই সংগঠনের সদস্য। বিগত কয়েকবছর যাবৎ আমি নাটক নির্মাণ কমিয়ে দিয়েছিলাম। মনোযোগী ছিলাম অভিনয়ে। তখন অবশ্য অভিনয় শিল্পী সংঘের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। এই সময়ে ডিরেক্টরস গিল্ডে নাজুক অবস্থা বিরাজ করে। গতবছর এই সংগঠন একেবারে খাঁদের কিনারায় পৌঁছায়। অনেকে পদত্যাগ করেছিল। সংগঠন ঠিক করার জন্য একটি তলবি কমিটি করা হয়। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। এই সংগঠন নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছিল। তখন কিছু নির্মাতা আমাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ করে। সংগঠনটির গুরুত্ব ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনে অংশ নেই। এখন আমার উদ্দেশ্য নির্মাতাদের কাজের সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাদের কল্যাণমূলক কাজগুলো ঠিকভাবে করা।


সম্পর্কিত

প্রশ্ন: নাটক সিনেমায় নির্মাতারাই ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’। আমাদের নির্মাতারা সেই মূল্যায়ন কতখানি পাচ্ছেন?
উত্তর: খুবই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। পরিচালকদের সেই সম্মানটা অবলুণ্ঠিত হয়েছে। এই অবস্থাটা পুনরুদ্ধারের জন্য আমার নেতৃত্বে আসা। বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনি এবং দেখি, আর্টিস্ট ওরিয়েন্টেড ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে আমাদের অভিনয় অঙ্গণ। শিল্পী তার মতো করে কাস্টিং, ক্যামেরার দৃশ্য, শিডিউলও নির্ধারণ করছে। ডিরেক্টর যদি গুণগতভাবে দক্ষ হয় তাহলে আর্টিস্ট আর এগুলো করতে পারবে না। নতুন নির্মাতা যারা আছে, তাদের গুণগত দক্ষতা বাড়াতে আমরা বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ, সেমিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছি। যাতে করে নির্মাতা তার সেই আগের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারেন।

প্রশ্ন: আপনার অভিনীত ‘দেনা পাওনা’ নাটকটি দর্শক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে…
উত্তর: প্রযোজনা সংস্থা ‘সিনেমাওয়ালা’ ও মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নাটক এর আগে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। এরপর বহু নাটক ফ্যামিলি নাম দিয়ে নির্মাণ হলেও দর্শক সেভাবে দেখেনি। তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে হাসান রেজাউলের পরিচালনায় ‘মা বাবা ভাই বোন’ নাটকটি দর্শক দেখেছিল। এখন কেএম সোহাগের পরিচালনায় ‘দেনা পাওনা’ দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। এই নাটকটির এতোগুলো পর্ব হওয়ার কথা ছিল না। শুরুতে মিনি সিরিয়াল হিসেবে সাত-আট পর্বে প্রচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথমে কয়েক পর্ব প্রচারের পর এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। ফেসবুক-ইউটিউবে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউস হচ্ছে। প্রযোজক ও পরিচালক আমার সঙ্গে তখন আলাপ করে। আমি জানাই, যেহেতু দর্শক পছন্দ করেছে এই কাজটি এত তাড়াতাড়ি শেষ না করতে। ইতোমধ্যে ত্রিশ পর্ব প্রচার হয়েছে। দর্শক এখন আরও বেশি পর্ব চাইছে। দেনা পাওনা’ এখন দেশে ও দেশের বাইরে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক। সিনেমাওয়ালা খুব সুচিন্তিতভাবে মানুষের ইমোশন বুঝে এ ধরনের ফ্যামিলি ড্রামা করে। এতে করে অনেক দর্শক এসব গল্পে তাদের জীবনের ছায়া খুঁজে পায়। এ কারণে এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রশ্ন: এতে একজন শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রটি আপনার কাছে কতটা আপন?
উত্তর: মধ্যবিত্ত পরিবারে বাবাই আসল শিক্ষক, তার কাছ থেকেই সন্তানরা মূল্যবোধ আদর্শের জায়গা শেখে। আমি আমার বাবার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এই নাটকে অনেক জায়গায় আমার বাবার কথা মনে রেখে আনন্দ-দুঃখ, শাসনের অভিব্যক্তি চরিত্রটির মাধ্যমে চিত্রনায়নের চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন: একজন শিক্ষক আপনার কাছে কেমন? আপনার প্রিয় শিক্ষক কে?
উত্তর: একজন বুদ্ধিদীপ্ত সম্পন্ন মানুষ ও তার সামাজিক আচারণ তৈরিতে সবার আগে পরিবার ভূমিকা রাখে। এরপরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক। বাবা-মায়ের চেয়েও তারা কম গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে আমি মনে করি। তাই একজন শিক্ষক সমাজ, রাষ্ট্র এবং জাতি গঠনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমার একেক শিক্ষা স্তরের প্রিয় শিক্ষক একেক জন। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে আলাদা আলাদা প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। তাদেরকে এখনও আমি শ্রদ্ধা সম্মান জানাই।

প্রশ্ন: ইদানিং ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বৈরী সম্পর্ক দেখা যায়..
উত্তর: এটা খুব ঘৃণিত কাজ। শিক্ষক যদি একদিনের জন্য শিক্ষক হয়ে থাকে তাকে সম্মান করতে হবে।

প্রশ্ন: ‘দেনা পাওনা’ পারিবারিক গল্পের নাটক। আপনার কাছে পরিবার বিষয়টি কেমন এবং পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার মন্ত্র কী?
উত্তর: পারিবারিক মূল্যবোধটা সবচেয়ে জরুরী। যেটা দিনেদিনে হারিয়ে যাচ্ছে। ‘দেনা পাওনা’ নাটকে পারিবারিক মূল্যবোধ আছে এবং এর অভাবও আছে। প্রায় সব পরিবারেরই এগুলোই আছে। এগুলো দেখানো হচ্ছে বলে দর্শক পছন্দ করছে। পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় মন্ত্র হচ্ছে ত্যাগ। বাব-মাকে সন্তানদের সুখের কথা ভেবে আজীবন অনেককিছু ত্যাগ করতে হয়। এটা যদি সন্তানরা বোঝে তাহলে পারিবারিক বন্ধনটা সব জেনারেশনে থাকবে।

প্রশ্ন: এবার ঈদে আপনার তিন সিনেমা বরবাদ, দাগি এবং জংলি আসছে। এ বিষয়ে কিছু বলেন
উত্তর: গত দুই বছরে ঈদে আমার অভিনীত প্রিয়তমা, সুড়ঙ্গ, তুফান সিনেমাগুলো রিলিজ হয়েছিল এবং ব্যবসায়িকভাবে সাফল্যও পেয়েছিল। এছাড়া লালশাড়ি, সোনারচর সিনেমাগুলোতেও ছিলাম। আসন্ন ঈদে আমার তিন সিনেমা আসছে। বরবাদে আমি ছোট একটি আইনজীবীর চরিত্র করেছি। দাগিতে আমি প্রধান ভিলেন এবং জংলিতেও একই। তবে জংলিতে খুব ঠাণ্ডা মাথার এন্টি হিরো। সিনেমায় এখন কিছু চরিত্রের জন্য আমাকে অবধারিত মনে করা হচ্ছে। এজন্য আমার নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে। আমিও চেষ্টা করছি কাজগুলো ঠিকভাবে করতে।

প্রশ্ন: মুক্তির আগে তিন সিনেমা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে! কেমন লাগছে?
উত্তর: ছোট হোক বা বড় হোক যে চরিত্রটি আমি করি সেটা আমার কাছে বড় কাজ। এবার একটা টেনশন হচ্ছে, কারণ বরবাদ এবং জংলি-তে আমি দুটিতেই আইনজীবী। এটা আমার কাছে বড় টেনশন এবং পরীক্ষার রেজাল্টের অপেক্ষার অনুভূতি কাজ করছে। দুটো আইনজীবীর চরিত্রই আলাদা। কতটা সফলভাবে করতে পেরেছি সেটা দর্শক রায় দেবেন।

Scroll to Top