ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে বিশ্ব নেতাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া | চ্যানেল আই অনলাইন

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে বিশ্ব নেতাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যতে নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন। তার এমন মন্তব্য অন্য অনেক দেশের সাথে মিলে গেছে, যার মধ্যে অন্যতম চীন।

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র এই শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করছে। চীন জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘পাল্টা দৃঢ় পদক্ষেপ’ নেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৫ এপ্রিল থেকে সমস্ত আমদানি পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক এবং ৯ এপ্রিল থেকে প্রায় ৬০টি দেশের ওপর আরও বড় ধরণের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় এমন পাল্টা সতর্ক বার্তা আসে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, এই পদক্ষেপগুলো অন্যায্য বাণিজ্য নীতির প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি দাবি করেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট ‘দয়া’ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, এই শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনশীলতা বাড়বে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার এই মন্তব্যও করেন যে, এই পদক্ষেপ ‘আমেরিকাকে আবারও ধনী করে তুলবে’।

বিশ্ব নেতারা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে-

ইউরোপীয় কমিশন:

ইউরোপীয় কমিশন: ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি ভন ডার লেইন বৃহস্পতিবার সকালে এক বিবৃতিতে বলেন, আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপের কারণে ‘অনিশ্চয়তা বাড়বে’, যা ‘বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের জন্য মারাত্মক’ পরিণতি ডেকে আনবে।

সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোর উপর এর প্রভাব কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন ভন ডার লেইন। তিনি উল্লেখ করেন, এখন সেই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউরোপ ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয় তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি আমাদের একজনের বিরুদ্ধে যান, তার মানে আপনি আমাদের সকলের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন’।

ইতালি:

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, সিদ্ধান্তটি ‘ভুল’ হয়েছে। তবে তিনি ‘বাণিজ্য যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে’ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তির বিষয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

স্পেন:

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্পেন ‘একটি উন্মুক্ত বিশ্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে’।

আয়ারল্যান্ড:

আয়ারল্যান্ডে টাওইসেক মিচেল মার্টিন বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ‘ভীষণ দুঃখজনক’ এবং কারো জন্যই লাভজনক নয়।

ফ্রান্স:

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার এলিসি প্রাসাদে নতুন শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়।

চীন:

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে শুল্ক বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, চীন নিজস্ব অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তারা দৃঢ়ভাবে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তাইওয়ান:

তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, তারা এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী চো জং তাই বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুতর প্রতিবাদ জানাবে।

দক্ষিণ কোরিয়া:

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ একটি বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু। তিনি বলেন, তার সরকার বাণিজ্য সংকট কাটানোর উপায় খুঁজে দেখবে, কারণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

জাপান:

জাপান বলেছে, তাদের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং মার্কিন-জাপান চুক্তিগুলো লঙ্ঘন করতে পারে।

থাইল্যান্ড:

থাইল্যান্ড বলেছে, তারা তাদের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করবে।

ইসরায়েল:

ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার আগেই যেখানে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর সব শুল্ক বাতিল করেছিলেন, এখন তাদের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ায় তারা সম্পূর্ণভাবে হতবাক হয়ে পড়েছেন। তারা বলছে, আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি বাতিল করার সিদ্ধান্ত এই পদক্ষেপকে প্রতিরোধ করবে।

অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, তাদের শুল্ক আরোপ চীনের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ ছিল। কারণ চীন, মার্কিন পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে। মার্কিন বাণিজ্যে শুল্ক বহির্ভূত বাধা আরোপ করেছে। সেইসাথে চীন এমনভাবে কাজ করেছে, যা আমেরিকান অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলোকে দুর্বল করে।

Scroll to Top