যেভাবে মোবাইল ব্যবহার করলে ক্ষতি কম হবে | চ্যানেল আই অনলাইন

যেভাবে মোবাইল ব্যবহার করলে ক্ষতি কম হবে | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

মোবাইল ফোন বর্তমানে আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। যোগাযোগ থেকে শুরু করে বিনোদন, শিক্ষা থেকে ব্যবসা- সব ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার বাড়ছে। তবে অতিরিক্ত বা অসচেতনভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

;

আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই উপায়গুলো।

মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে বাঁচতে কিছু টিপস
মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় রেডিয়েশন নির্গত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই রেডিয়েশনের প্রভাব কমাতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

যখন ফোনে কথা বলবেন, তখন সরাসরি কানে ব্যবহার না করে হেডফোন বা স্পিকার ফোন ব্যবহার করুন। এর ফলে রেডিয়েশনের সরাসরি প্রভাব থেকে কান এবং মস্তিষ্ককে বাঁচানো যাবে।

এছাড়া যখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না, তখন এটিকে আপনার শরীর থেকে দূরে রাখুন। প্যান্টের পকেটে বা বুকের কাছে না রেখে ব্যাগ বা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে রাখুন।

রাতে ঘুমানোর সময় মোবাইল বিছানার পাশে না রেখে দূরে রাখুন অথবা বন্ধ করে দিন। বর্তমান সময়ে কম রেডিয়েশনের কিছু মোবাইল ফোনের মডেল বাজারে আছে। এই সকল মোবাইল ফোনের দাম ও বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন জনপ্রিয় মোবাইল ওয়েবসাইট ‘MobileDokan’ থেকে।

টাওয়ার থেকে দুর্বল সংকেত পাওয়া গেলে ফোন বেশি রেডিয়েশন নির্গত করে, তাই এমন পরিস্থিতিতে ফোন ব্যবহার কম করাই ভালো। লিফটের ভেতরে বা গাড়ির মধ্যে যেখানে নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকে, সেখানে ফোন ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন।

মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর উপায়
মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একটানা দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ক্লান্তি, ঝাপসা দেখা এবং ড্রাই আইয়ের মতো সমস্যা হতে পারে। তাই প্রতি ২০ মিনিট ব্যবহারের পর অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে তাকান। এটি আপনার চোখের পেশীগুলোকে বিশ্রাম দেবে।

এছাড়াও, মোবাইলের ব্রাইটনেস কমিয়ে ব্যবহার করুন এবং অ্যান্টি-গ্লেয়ার স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার করতে পারেন। রাতের বেলা বা কম আলোতে মোবাইল ব্যবহার করা চোখের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইল ব্যবহার করলে ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হতে পারে। মোবাইল ব্যবহারের সময় সঠিক বসার ভঙ্গি বজায় রাখুন এবং কিছুক্ষণ পর পর বিরতি নিন।

মোবাইল ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন এবং সেই সময়ের বাইরে ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন, যাতে অপ্রয়োজনীয় কারণে বারবার ফোন দেখতে না হয়।

শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিয়ম
শিশুদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাদের চোখের বিকাশ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এখনও সম্পূর্ণ হয় না, তাই মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব তাদের উপর বেশি পড়তে পারে।

খুব ছোট বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়া একেবারেই উচিত না। একটু বড় বাচ্চাদের জন্য স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করে দিন এবং সেই সময়সীমা কঠোরভাবে মেনে চলুন।

তাদের সাথে বসে শিক্ষামূলক অ্যাপ বা ভিডিও দেখুন এবং তাদের ব্যবহারের উপর নজর রাখুন। ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করতে বলুন।

শিশুদের আউটডোর গেম এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপের প্রতি উৎসাহিত করুন, যাতে তারা মোবাইল ফোনের প্রতি অতিরিক্ত আকৃষ্ট না হয়। তাদের সাথে গল্প করুন, বই পড়তে উৎসাহিত করুন এবং অন্যান্য সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখুন।

রাতে মোবাইল ব্যবহার করলে কী ক্ষতি হয়
রাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে আমাদের ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। মোবাইলের স্ক্রিন থেকে নির্গত হওয়া নীল আলো আমাদের মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নামক হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা আমাদের ঘুম আসতে সাহায্য করে। এর ফলে অনিদ্রা, ঘুমের অভাব এবং ঘুমের গুণগত মান কমে যেতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে।

তাই রাতের বেলা ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করুন। শোবার ঘরে মোবাইল ফোন না রেখে অন্য কোনো ঘরে রাখুন। রাতে অ্যালার্ম দেওয়ার জন্য যদি ফোন ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে সেটিকে বিছানা থেকে দূরে রাখুন। ঘুমের আগে হালকা গরম পানি পান করতে পারেন বা বই পড়তে পারেন, যা আপনাকে শান্ত হতে এবং ভালো ঘুমোতে সাহায্য করবে।

মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
মোবাইল আসক্তি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদি আপনি মনে করেন আপনি মোবাইল ফোনের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, তাহলে এর থেকে মুক্তির জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।

প্রথমত, নিজের ব্যবহারের ধরণ পর্যবেক্ষণ করুন এবং চিহ্নিত করুন কখন এবং কেন আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন।

দ্বিতীয়ত, দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য নির্ধারণ করুন এবং সেই সময় অন্য কোনো কাজ করুন।

তৃতীয়ত, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সরাসরি দেখা করুন, কথা বলুন এবং তাদের সাথে সময় কাটান।

চতুর্থত, বিভিন্ন শখের প্রতি মনোযোগ দিন এবং সেই কাজে নিজেকে নিয়োজিত করুন।

পঞ্চমত, ব্যায়াম বা যোগা করার মাধ্যমে আপনি আপনার মনকে শান্ত রাখতে পারেন এবং মোবাইল ফোনের প্রতি আকর্ষণ কমাতে পারেন।

প্রয়োজনে মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। যিনি আপনাকে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবেন। বিভিন্ন মোবাইল মোবাইল অ্যাপ রয়েছে যা আপনাকে আপনার ফোন ব্যবহারের সময় ট্র্যাক করতে এবং তা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যেমন স্ক্রিন টাইম ট্র্যাকার।

মোবাইল ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
মোবাইল ফোন ব্যবহারের কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে আমরা অনেক ক্ষতি এড়াতে পারি। মোবাইল ফোন ব্যবহারের কিছু সঠিক নিয়ম নিম্নে একটি তালিকায় উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। এগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে সঠিক পদ্ধতিতে আপনার ফোন ব্যবহার করতে পারবেন এবং যেকোন ক্ষতি এড়িয়ে চলতে পারবেন।

রাস্তা পার হওয়ার সময় বা গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত না। এতে করে আপনার মনোযোগ ফোনের উপরে থাকবে এবং বড় কোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন।

পাবলিক প্লেসে বা অন্যের ব্যক্তিগত স্থানে উচ্চস্বরে মোবাইল ফোনে কথা বলা উচিত না।

নিয়মিত আপনার মোবাইল ফোনের সফটওয়্যার আপডেট করুন এবং একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

মোবাইল ফোনে ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।

অজানা বা সন্দেহজনক লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এর মাধ্যমে আপনার ফোনে ক্ষতিকর সফটওয়্যার ইনস্টল হয়ে যেতে পারে।

পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।

মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা নিয়ে এলেও এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে এবং অতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করলে আমরা এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি এবং একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারি। মনে রাখবেন, প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে উন্নত করার জন্য, কিন্তু এর ব্যবফার এমন ভাবে উচিত না যেটা আমাদের শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে।

Scroll to Top