নতুন ইপিসি পেতে চীন সরকার ও ইরআরডি’র কাছে টেলিটকের আবেদন | চ্যানেল আই অনলাইন

নতুন ইপিসি পেতে চীন সরকার ও ইরআরডি’র কাছে টেলিটকের আবেদন | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে তিন চীনা প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে টেলিটক। চীনা তিন কোম্পানির মধ্য থেকে একটিকে নির্বাচিত করা হবে না সবার জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করবে, তা নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজছে টেলিটক।

;

রাষ্ট্রায়ত্ত এ মোবাইল অপারেটর কোম্পানিটি এজন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) পরামর্শ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২ মার্চ টেলিটককে নিজেদের মতামত জানিয়েছে বিপিপিএ।

বিপিপিএ পরিচালক (উপসচিব) সাখাওয়াত হোসেনের সই করা ঐ চিঠিতে বলা হয় এরূপ অবস্থায় সব দরপত্র বাতিলের নিয়ম পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালায় উল্লেখ আছে। এর সাথে আরও বিষদ নীতিমালাও দেয়া আছে। সেই অনুযায়ী টেলিটক অগ্রসর হতে পারে। পাশাপাশি যেহেতু এটি জি টু জি’এর আওতাভুক্ত তাই এই বিষয়ে ইআরডির মতামত গ্রহণ করতে পারে।

গত ১৮ই মার্চ চীন সরকারের মতামত নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইআরডিকে চিঠি দিয়েছে টেলিটক। কাজেই এই বিষয়টির সমধান এখন নির্ভর করছে ইআরডি এবং চীনা দূতাবাসের আলচনার ওপর। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি ইআরডি যদি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে তাহলে চীন সরকারের পক্ষ থেকে আরও অন্যান্য ইপিসি কোম্পানির নাম প্রস্তাব করার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে ইআরডি থেকে বলা হয়েছিল, নতুন করে টেলিটক দরপত্র আহবান করবে কি না সেটা টেলিটকের এখতিয়ার। এই বিষয়ে টেলিটক যদি পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে নতুন ইপিসি কোম্পানির নাম চেয়ে আবেদন করে তাহলে আমরা চীনা দূতাবাসের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে টেলিটক এবার শুধুমাত্র পরামর্শ না চেয়ে সরাসরি চীন সরকারের মতামত গ্রহণের কথা উল্লেখ করে ইরআরডিকে চিঠি দিয়েছে।

এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যেহেতু মূল্যায়ন কমিটি তিন ইপিসি কোম্পানিকেই অযোগ্য নির্ধারণ করেছে, সেহেতু এই প্রকল্পে এই পর্যন্ত প্রাপ্ত সকল দরপত্রকে গত ২রা ফেব্রুয়ারি বাতিল করা হয়। আর তখন থেকেই জটিলতায় পড়েছে টেলিটক।

বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে। গত চার বছরে চীন দুই দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ বাংলাদেশকে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ যোগাযোগবিদ এক অধ্যাপক বলেন, চীন আমাদের দীর্ঘদিনের উন্নয়নের অংশীদার। নানা প্রকল্পে আমাদের সহযোগিতা করে আসছে। ঋণ বা অনুদান দিয়েছে বলে দেশের নিজস্ব স্বার্থ বিকিয়ে কোনো প্রকল্পে হাত দেওয়া উচিত না। বরং জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখা উচিত। ঋণের আওতাভুক্ত এইসব প্রকল্প ঝুলে গেলে বাংলাদেশের জন্য তা সুফল বয়ে আসবে না। তাই খুব দ্রুত এই প্রকল্পের সমাধান করা দরকার। দুই দেশের উচিত পরস্পরের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি কোম্পানি দরপত্রের নিয়ম ভেঙ্গেছে। যার ফলে এই তিন কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে নতুন কোম্পানিদের মধ্যে দরপত্র আহবান করা যৌক্তিক। তাদের মতে, কারসাজির নেতৃত্ব দেয়া চায়না মেশিনারীজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন কোম্পানি (সিএমইসি) যদি আবারও দরপত্র আহবানের সুযোগ পায় তাহলে সংকট ঘনীভূত হবে। সঠিক সিদ্ধান্তই টেলিটককে এই সংকট থেকে বাঁচাতে পারে।

টেলিটক সূত্রে জানা যায়, টেলিটকের ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে চীন জোগান দিচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ এবং বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।

জি-টু-জি প্রকল্প অনুযায়ী, এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারিত করে দেয় চীন। কিন্তু দরপত্রে অংশ গ্রহণের নিয়ম ভাঙার কারণে তাদের সবাইকেই কারিগরি মূল্যায়নে অযোগ্য হিসেবে বাতিল করা হয়। তাদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সিন্ডিকেট গড়ে তোলা তিন কোম্পানি হলো, চায়না ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিআইটিসিসি), ইউনান কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ (ওয়াইসিআইএইচ) ও চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কোম্পানি (সিএমইসি)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চায়না মেশিনারিজ ২০১৩ সালে বিটিসিএলের ইন্সটোলেশন অব এনজিএন বেজড, টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ (এনটিএন) কাজ করার জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। সেসময় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে দুর্নীতির কারণে চীন সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এলে বিটিসিএলের প্রায় ১৮২ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি ভেস্তে যায়।

Scroll to Top