পরমাণু বিদ্যুৎ এআই-এর জ্বালানির চাহিদা পূরণে কতটা সক্ষম | চ্যানেল আই অনলাইন

পরমাণু বিদ্যুৎ এআই-এর জ্বালানির চাহিদা পূরণে কতটা সক্ষম | চ্যানেল আই অনলাইন

ভবিষ্যতে ছোট আকারের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা ভাবা হচ্ছে, যার নাম ‘স্মল মডিউলার রিঅ্যাক্টর’ বা এসএমআর৷ তবে আর্থিক বিবেচনায় এটি কতখানি সফল হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়৷ নিরাপদ ও নমনীয়তার কারণে স্মল মডিউলার রিঅ্যাক্টর বা এসএমআরকে পরমাণু শক্তির ভবিষ্যৎ মনে করা হচ্ছে৷

গুগল ও অ্যামাজন এই খাতে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করছে৷ কিন্তু এটি কি আসলে নতুন উদ্ভাবন, নাকি পুরনো প্রযুক্তির ছদ্মবেশ? এছাড়াও জ্বালানির চাহিদা পূরণে কতটা সক্ষম হবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

সোমবার (৩ মার্চ) ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের ব্রিটিশ সমাধান হচ্ছে রোলস রয়েস কোম্পানির এসএমআর৷ একেকটি রিঅ্যাক্টর ৪৭০ মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদন করবে৷ অনুমতি সাপেক্ষে ২০৩২ সাল নাগাদ প্রথম রিঅ্যাক্টরটি চালু হতে পারে৷

বর্তমানে চালু থাকা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে সমস্যা আছে, এসএমআর কি তার সমাধান হতে পারবে? আর বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কেন তাদের নিজস্ব পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে আগ্রহী?

মিলান পলিটেকনিকের জর্জো লোকাতেলি বলেন, স্মল মডিউলার রিঅ্যাক্টরের প্রথম সুবিধা হচ্ছে, প্রতিটা রিঅ্যাক্টরের আকার ছোট৷ সে কারণে আপনাকে কম কাজ করতে হবে, কম কংক্রিট দরকার হবে৷ খননযন্ত্রটাও ছোট হলে চলবে৷ তবে মূল শব্দ হচ্ছে দ্বিতীয়টা, স্মল মডিউলার৷ মডিউলার মানে কী? স্মল মডিউলার মানে হচ্ছে, রিঅ্যাক্টরের বিভিন্ন অংশ কারখানায় তৈরি হয়, এরপর সেগুলো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে গিয়ে জোড়া লাগানো হয়৷

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এমভি রামানা বলেন, তারা দেখাতে চায় যে, ভবিষ্যতে অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হবে৷ তারা এই খাতে বিনিয়োগের কথা বলছে৷ তাদের ডাটা সার্ভারগুলো চালাতে যে বিদ্যুতের প্রয়োজন হচ্ছে, তা আসছে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে৷ পরিবেশের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অনেক পানির প্রয়োজন হচ্ছে৷ তারা চায় না, মানুষ এসব নিয়ে কথা বলুক৷ সুতরাং এটা তাদের জন্য একটা সস্তা বিনিয়োগ৷

ডাটা সেন্টারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে৷ জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতাও অনেক বেশি৷ এই বিষয়গুলো কখনও সামনে আসে না৷ ডাটা সেন্টারের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা ২০১৫ সালের পর দ্বিগুন হয়েছে৷ ২০২৩ সালে সেটি ৪১১ টেরাওয়াট ঘণ্টায় পৌঁছেছিল৷ এত বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার জন্য একটি টেকসই সমাধান দরকার৷

কারণ এআই এর জন্য সবসময় বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷ এআই এর চাহিদা ক্রমে বাড়ছে৷

জর্জো লোকাতেলি বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র খুব ভালো চলে যখন সেটা সারাদিন, সবসময় কাজ করে৷ কোন প্রযুক্তির জন্য সারাদিন, সারাক্ষণ আর পরিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাগে? ডাটা সেন্টার৷ এগুলো সচল রাখতে অনেক বিদ্যুৎ প্রয়োজন, অনেক বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ দরকার, এবং সবসময় এই বিদ্যুৎটা দরকার৷ সবসময় একইরকম৷ এটা একটা নিখুঁত বিয়ের মতো৷

কিন্তু এসএমআর এর খরচ কেমন? এগুলো কি সত্যিই সাধারণ রিঅ্যাক্টরের চেয়ে কম দামি?

এমভি রামানা বলেন, আপনি যখন একটা রিঅ্যাক্টর বানান তখন সেটা একটি ছোট রিঅ্যাক্টরের চেয়ে পাঁচগুন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে৷ ফলে যে কোম্পানি এটা বানিয়েছে তারা পাঁচগুন বেশি রাজস্ব আয় করবে, কারণ, তারা পাঁচগুন বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি করবে৷ তবে এমন রিঅ্যাক্টর তৈরিতে ছোট রিঅ্যাক্টর তৈরির চেয়ে পাঁচগুন বেশি খরচ হবে না৷

এসএমআর-এ বিনিয়োগ আর্থিকভাবে সুফল বয়ে আনবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়৷ তাই কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী নাও হতে পারে৷

জর্জো লোকাতেলি জানান, এক্ষেত্রে কেউ প্রথম হতে চায় না৷ কারণ, খরচের বিষয় আছে, ঝুঁকি আছে, অনেক অজানা আছে৷ সবাই অপেক্ষায় আছে যে, কেউ একজন প্রথমে শুরু করবে৷ তখন সমস্যার সমাধান দেখা যাবে, ডিজাইন সমস্যার সমাধান দেখা যাবে, নির্মাণ সমস্যার সমাধান দেখা যাবে৷ তখন তারা বলবে, হ্যাঁ, আমাকে আরেকটা দিন৷

সবার জন্য এটি এখন অপেক্ষার খেলা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসএমআর ভবিষ্যতে জ্বালানিখাতে কতটা অবদান রাখতে পারবে, তা এখনও অনিশ্চিত৷

Scroll to Top