বিশ্বের ১৫ শতাংশ প্রযুক্তি কর্মী ভারতীয়, তারপরেও এআই উদ্ভাবনে পিছিয়ে ভারত

বিশ্বের ১৫ শতাংশ প্রযুক্তি কর্মী ভারতীয়, তারপরেও এআই উদ্ভাবনে পিছিয়ে ভারত

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

বিশ্বের প্রায় ১৫ শতাংশ প্রযুক্তি কর্মী ভারতীয় হলেও বিশ্বজুড়ে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের তীব্র প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে ভারত।

চ্যাটজিপিটি বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টির দুই বছর পর, চীনের ডিপসিক জেনারেটিভ এআই অ্যাপ্লিকেশন তৈরির খরচ ব্যাপকভাবে কমিয়ে এআই প্রযুক্তি শিল্পে নতুন আলোড়ন তুলেছে। তবে ভারত পিছিয়ে পড়ছে চ্যাটবটের মতো প্রযুক্তির জন্য নিজস্ব ফাউন্ডেশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তৈরিতে।

পিছিয়ে আছে ভারত

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই গবেষণা, একাডেমিয়া ও সামরিক প্রয়োজনে এআই উন্নয়নে চার থেকে পাঁচ বছর এগিয়ে রয়েছে। স্ট্যানফোর্ডের এআই ভাইব্র্যান্সি ইনডেক্সে শীর্ষ পাঁচে থাকলেও পেটেন্ট, বিনিয়োগ ও গবেষণায় ভারত এখনও অনেক পিছিয়ে। ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট এআই পেটেন্টের ৬০ শতাংশ পেয়েছে চীন এবং ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে ভারতের ভাগ্য জুটেছে মাত্র ০ দশমিক ৫ শতাংশ ।

নেতৃত্ব দিতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানগুলো

এআই প্রতিযোগিতায় চীনে অ্যান্ট গ্রুপ এবং জেডি ডট কম -এর মতো কোম্পানিগুলো এগিয়ে রয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনে ভেঞ্চার ডিলের সংখ্যা বেশি, যদিও বিনিয়োগের পরিমাণ এখনও কম। অন্যদিকে, ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সংকটে বাইজুস এর মতো কোম্পানিগুলো আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। টিসিএস এবং ইনফোসিস এর মতো টেক জায়ান্টরা জেনারেটিভ এআই এর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারলেও অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং দুর্বল চাহিদার মুখোমুখি। গ্লোবাল ব্যাংকিং সংকট এবং আইটি খাতের খরচ কমে যাওয়ায় তাদের অবস্থা আরও জটিল।

ভারত সরকারের দাবি

ভারত সরকার দাবি করছে, ডিপসিকের সমতুল্য একটি স্থানীয় এআই মডেল তৈরির কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। স্টার্টআপ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষকদের হাজার হাজার উচ্চমানের চিপ সরবরাহ করা হয়েছে, যাতে ১০ মাসের মধ্যে এই মডেল তৈরি করা যায়।

সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ এআই নেতারা ভারতের সক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন। ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, ভারত এআই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য।

এছাড়াও মাইক্রোসফ্ট ও এনভিডিয়ার মতো সংস্থাগুলো ভারতের এআই অবকাঠামো উন্নয়নে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

বরাদ্দ কম

ভারতের এআই স্টার্টআপগুলোও ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তুলনায় অনেক কম বেসরকারি বিনিয়োগ পেয়েছে। এআই মিশনের জন্য ভারতের বরাদ্দ মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিনিয়োগের তুলনায় নগণ্য। এছাড়াও হিন্দি, মারাঠি বা তামিলের মতো আঞ্চলিক ভাষায় এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য উচ্চমানের ডেটাসেটের অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ভারত ছাড়ছেন প্রতিভাবানরা

স্ট্যানফোর্ডের গবেষণা অনুযায়ী, ভারতের প্রতিভাবান আইটি কর্মীরা ক্রমশ দেশ ছাড়ছেন, কারণ ভারতে গভীর গবেষণার পরিবেশের অভাব রয়েছে। ভারতের বেঙ্গালুরুর ২০০ বিলিয়ন ডলারের আউটসোর্সিং শিল্প গড়ে উঠেছে, যেখানে লাখ লাখ কোডার কাজ করেন, তারা এআই উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আইটি সংস্থাগুলো সস্তার সার্ভিস-ভিত্তিক কাজ থেকে এআই প্রযুক্তি উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছে না। এই শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব স্টার্টআপগুলোর ওপর পড়েছে।

বলা বাহুল্য, এআই খাতে দীর্ঘমেয়াদে ফাউন্ডেশনাল মডেল তৈরি করাটা বর্তমানে ভারতের জন্য অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এআই খাতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অর্জন এবং আমদানি নির্ভরতা ও নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে বাঁচতে এটি জরুরি। এছাড়াও এআই মডেল চালনার জন্য হার্ডওয়্যার অবকাঠামো ও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন বাড়ানোও প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, দ্য ইকোনমিক টাইমস

Scroll to Top