ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর – কারাগারে বিএনপি নেতাদের ওপর অত্যাচার জুলুম চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এসময় রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ এবং তাদের নেতাদের যে বক্তব্য এবং আচরণ আদিম সমাজের মানুষের মতো। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
তিনি বলেন, ওরা পাল্টা আক্রমণের মধ্যেও কোনো সভ্য শব্দ খুঁজে পায় না। তারা খুঁজে পায় সমস্ত ধরনের অসভ্যতা। তারা বানরের ভাগ বাটোয়ারার যে নির্বাচন করছে সেরকম ভাগ বাটোয়ারা মতোই এখন বান্দরামি করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের ওপর তারা যেই অসভ্য আচরণ করছে, আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ অস্ত্র সংগ্রহ করছে বিএনপির কর্মসূচি মধ্যে আক্রমণ করার জন্য। এইযে আওয়ামী নেতারা মাইক্রোবাসে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রসহ ধরা পড়েছে র্যাবের কাছে। প্রথমে কিন্তু র্যাব এটা বুঝতে পারেনি যে, তারা আওয়ামী লীগের। পরে তারা বুঝতে পেরেছে। এর উত্তর কি দিবেন হাছান মাহমুদ সাহেবরা?। এগুলোর উত্তর নাই বলেই এখন ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। নিজেদের শিক্ষা, রুচি- জলাঞ্জলি দিয়ে আপনারা ওই পর্যায়ে নেমে গেছেন।
অসহযোগ কর্মসূচি সম্পর্কে রিজভী বলেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ঢাকা অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির তিন দিনের আজ প্রথম দিন ছিল। প্রথম দিনে বিভিন্ন ঘটনা ও নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জানান দিয়েছে জনগণ ও জনশক্তি এই স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে নাই। অবৈধ সরকার রাষ্ট্রকে হাতের কব্জায় নিয়েছে। আর এটা নিতে গিয়ে জনগণকে ত্যাজ্য করেছে। জনগণকে ত্যাজ্য করেই তারা গণতন্ত্রের শক্তির উপর জুলুম নির্যাতন হামলা মামলা নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে। বিশেষ করে কেরানীগঞ্জ কারাগারে যেভাবে অত্যাচার ও জুলুম চালাচ্ছে; নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজন দেখা করে এসে নির্মম নির্যাতনের যে বর্ণনা দিচ্ছে; তা মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিচ্ছে। তারা এই ধরনের কার্যক্রম করে বাংলাদেশ থেকে বিরোধী দলের শক্তি ধ্বংস করার সকল পরিকল্পনা আয়োজন করেছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা দুঃশাসনের মাফিয়া চাকরের মতো আস্ফালন দেখাচ্ছে। তারা নির্বাচনি মাঠ একপাক্ষিক করার জন্য কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথম পদক্ষেপ হলো বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে ভয় দেখানো, সাজানো মিথ্যা মামলা দেওয়া এবং পূর্বপরিকল্পিত নাশকতা করে সেগুলোর মধ্যে নেতাকর্মীদের নাম ঢুকানো। এরপরও যদি বিরোধীদলকে দমন না যায় তাহলে কারাগারে অসুস্থ নেতাকর্মীদেরকে চিকিৎসা না দিয়ে মেরে ফেলা। মিছিলের মধ্যে গুণ্ডা আওয়ামী লীগের ক্যাডার লেলিয়ে দিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে। পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। জেল কাস্টডিতে প্রতিদিনই মৃত্যুর হার বাড়ছে। আমরা এগুলো প্রতিদিনই বলছি। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এগুলো কোনো সাজানো গল্প নয়।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষা কত নির্মম নির্দয় হতে পারে তা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। তারা আওয়ামী লীগের স্টাফ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। হিটলারের নাৎসীবাহিনীর কাছ থেকে দর্শন নিয়ে তারা নিজের দেশে বিরোধীদলের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। এমনকি মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসার আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত; সেই আদালত এখন আওয়ামী পাড়ায় পরিণত হয়েছে। সেই আদালত এখন আওয়ামী খেলাঘরে পরিণত হয়েছে। এটা এই জাতির জন্য, দেশের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের।
বিএনপি নেতা বলেন, প্রতিদিনই পরিকল্পিতভাবে নাশকতা করছে আওয়ামী লীগ আর সেখানে নাম দিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। কিন্তু ১৩, ১৪, ১৫ সালের মতো যেখানেই নাশকতা হয়েছে সেখানে প্রথম ধরা পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা যুবলীগ ছাত্রলীগ। ২০১৫ সালে যখন নাশকতা করে বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম দেওয়া হয়েছিল তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কয়েকজন বলেছিল যে, ঘটনা ঘটাই আমরা আর নাম হয় বিএনপির। এগুলোর সব তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।
সূত্র: ঢাকাটাইমস
আইএ/ ২১ ডিসেম্বর ২০২৩