জিবিএস সিনড্রোমের প্রাদুর্ভাবে ভারতে বাড়ছে পক্ষাঘাত | চ্যানেল আই অনলাইন

জিবিএস সিনড্রোমের প্রাদুর্ভাবে ভারতে বাড়ছে পক্ষাঘাত | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

গুইলেন-ব্যারে সিনড্রোম বা জিবিএস হল একটি বিরল স্নায়ুবিক অবস্থা যেখানে ইমিউন সিস্টেম স্নায়ু আক্রমণ করে, পেশী দুর্বলতা এবং কখনও কখনও পক্ষাঘাত ঘটায়। সম্প্রতি সময় ভারতে রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে যার ফলে বাড়ছে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। 

বিবিসি জানিয়েছে, গত মাসে পশ্চিম ভারতের পুনে শহরের একজন স্কুল শিক্ষিকা তার ছয় বছরের ছেলেকে পড়ানোর সময় লক্ষ্য করেন যে ছেলেটি পেন্সিলটি সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারছে না। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন এটি শুধুই রাগের প্রকাশ, কিন্তু পরে জানতে পারেন যে এটি গুইলেন-ব্যারে সিনড্রোম এর প্রথম লক্ষণ।

কয়েকদিনের মধ্যেই ছেলেটির অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে। সে হাত-পা নাড়াতে অক্ষম হয়ে পড়ে, গিলতে, কথা বলতে এবং শ্বাস নিতেও সমস্যা হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়। এখন সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।

পুনেতে জানুয়ারির শুরু থেকে জিবিএস এর প্রায় ১৬০টি কেস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ৪৮ জন রোগী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছেন, যার মধ্যে ২১ জন ভেন্টিলেটরে আছেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩৮ জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।

GOVT
লক্ষণ ও প্রভাব: 

জিবিএস সাধারণত পা ও হাতে ঝিনঝিন বা অবশ হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়, এরপর পেশী দুর্বলতা এবং জয়েন্টগুলো নাড়াতে অসুবিধা দেখা দেয়। দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণগুলো আরও খারাপ হয়। মৃত্যুর হার তিন থেকে ১৩% পর্যন্ত হতে পারে, যা স্বাস্থ্যসেবার মানের ওপর নির্ভর করে।

প্রাদুর্ভাবের কারণ:

পুনেতে এই প্রাদুর্ভাবের কারণ ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর জেজুনি নামক একটি ব্যাকটেরিয়া, যা খাদ্যবাহিত সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ব্যাকটেরিয়া বিশ্বব্যাপী জিবিএস এর সবচেয়ে বড় চালক।

১৯৯০ এর দশকে চীনে এই ব্যাকটেরিয়া এবং জিবিএস এর মধ্যে যোগসূত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেখানে মুরগি এবং হাঁসের বিষ্ঠা দ্বারা দূষিত পানিতে খেলার সময় শিশুরা সংক্রমিত হতো।

ভারতে জিবিএস এর অবস্থা:

ভারতে জিবিএস সম্পূর্ণ নতুন নয়। ব্যাঙ্গালোরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস এর গবেষণায় দেখা গেছে যে ৭৯% জিবিএস রোগী আগেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর সংক্রমণের শিকার ছিলেন। এছাড়াও, ৬৫% রোগীর ক্ষেত্রে সহ-সংক্রমণ দেখা গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের জটিল মিথস্ক্রিয়া নির্দেশ করে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট: 

সারা বিশ্বেই জিবিএস এর প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের প্রথম সাত মাসে পেরুতে ২০০টিরও বেশি সন্দেহভাজন কেস এবং চারটি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুই-তৃতীয়াংশ কেস ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর সংক্রমণের সাথে যুক্ত ছিল।

২০১৫ সালে ব্রাজিল জিকা ভাইরাসের সাথে জিবিএসের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর এবং জিবিএস এর সম্পর্ক

ক্যাম্পাইলোব্যাক্টরের একটি নির্দিষ্ট স্ট্রেনের বাইরের স্তর চিনির আবরণযুক্ত, যা মানুষের স্নায়ু কোষের আবরণের সাথে মিলে যায়। যখন রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে, তখন এটি স্নায়ুকেও আক্রমণ করে। এই প্রক্রিয়াকে আণবিক মিমিক্রি বলা হয়। তবে, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টরের খুব কম স্ট্রেনেই এই বৈশিষ্ট্য থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব দেশে ভালো স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে, সেখানে ক্যাম্পাইলোব্যাক্টারের সাথে যুক্ত জিবিএসের সংখ্যা কম হয়ে থাকে। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিউ উইলিসন বলেছেন, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টার একটি স্থানীয় রোগ যার লক্ষ লক্ষ কেস সর্বদা ঘটছে। এটি সর্বদা পরিবেশে বিদ্যমান।

চিকিৎসা ও চ্যালেঞ্জ:

জিবিএস এর কোনও প্রতিকার নেই। চিকিৎসকরা প্লাজমা এক্সচেঞ্জ এবং শিরায় ইমিউনোগ্লোবুলিন ব্যবহার করে রোগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করেন। তবে জিবিএস নির্ণয়ের জন্য কোনও একক পরীক্ষা নেই। রোগ নির্ণয় মূলত ক্লিনিকাল লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে করা হয়, যা ভুল বা দেরিতে রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

তাছাড়া টিকা খুব কমই জিবিএস এর বিরুদ্ধে কাজ করে।

Scroll to Top