একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, চাঁদাবাজ-লুণ্ঠনকারীদের আর ক্ষমতায় আনা যাবে না। বর্তমানেও যদি কেউ লুণ্ঠনকারী হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কি আরেকবার পরীক্ষা করার দরকার আছে? দরকার নাই।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে জয়পুরহাট সার্কিট হাউস মাঠে বিশাল এক কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই, প্রয়োজনীয় সংষ্কার সাধনের জন্য। তাড়াহুড়া করে আমরা নিজেরাও ক্ষমতায় যেতে চাই না। কেউ তাড়াহুড়া করে ক্ষমতায় যাক সেটাও আমরা চাই না।
তিনি বলেন, আমরা একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। যেখানে সকল ধর্মের মানুষ সমানভাবে যোগ্যতার সাথে সুখে বসবাস করতে পারবে। আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। স্বৈরাচার ও দুরাচার দূর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই ও আন্দোলন একসাথে চলবে।

জয়পুরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে এ কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের আমির ডা. ফজলুর রহমান এর সভাপতিত্বে ও জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়া মন্ডল এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য দেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বগুড়া অঞ্চল পরিচালক মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বগুড়া অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাও. আব্দুর রহিম ও অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম, বগুড়া শহর জামায়াতের আমির মো. আবিদুর রহমান সোহেল, বগুড়া জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক, সিরাজগঞ্জ জেলা আমির শাহিনুর আলম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ড. এনামুল হক।

জামায়াত আমির বলেন, যারা শহীদ হয়েছেন তারা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সুখী দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তাদের দাবি ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র; যেখানে সবাই সমান অধিকার পাবে। তাই যদি করতে হয় তাহলে অবশ্যই একটি অর্থবহ নির্বাচন করতে হবে। আর সেই নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংষ্কার করতে হবে। এজন্য জামায়াতে ইসলামী তখনই বলে দিয়েছে, এই সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই প্রয়োজনীয় সংষ্কার সাধনের জন্য। তাড়াহুড়া করে আমরা নিজেরাও ক্ষমতায় যেতে চাই না। কেউ তাড়াহুড়া করে ক্ষমতায় যাক সেটাও আমরা চাই না। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে সুযোগ দিবেন জনগণ যাদেরকে ভালোবেসে ভোট দিবেন, তারা যেন বাংলাদেশের পরিচালনায় আসে। সেজন্য প্রয়োজনীয় সংষ্কার শেষে আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন দেখতে চাই।
তিনি বলেন, কিন্তু অতীতের দু:খজনক ঘটনা হলো- যারা নির্বাচনের আগে জাতিকে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছিল, ওয়াদা দিয়েছিল, ইশতেহার দিয়েছেন, নির্বাচনের পরে তারা সব ভুলে গেছেন। পাঁচ বছর জাতিকে দেয়া ওয়াদা বাস্তবায়নে তারা আগ্রহী ছিলেন না। বরঞ্চ অনেকেই প্রতিপক্ষকে দমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আপনি তো আগে দেশ গঠন করবেন। আপনি দমনে ব্যস্ত হলেন কেন? দেশ গঠন করলে তো এমনিই যার যেটা পাওনা বিচারের মাধ্যমে পাবে এবং নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ উপকৃত হবে।
এর কারণ দুইটা- মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ক্ষমতায় যারা গিয়েছেন তারা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করতেন না। আদালতে আখেরাতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাদের দায়িত্বের জন্য জবাবদিহি করতে হবে এই বিশ্বাস তাদের ছিল না। যদি থাকতো তাহলে তারা আল্লাহকে ভয় করে চলতেন। তাদের হাতে জনগণের জীবন সম্পদ, ইজ্জত, সব কিছু নিরাপদ থাকতো।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে তারা জনগণকে বোকা মনে করতো। তারা রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা ক্ষুধার্ত হয়ে বসে থাকেন, কখন ক্ষমতায় যাবো। আর পেট ভরে খাইতে খাইতে বদ হজম পর্যন্ত পৌঁছবে। বদ হজম হচ্ছে, ক্ষমতা যখন চলে যায়, তখন পেটে খোঁচা দিলে সব পেট থেকে বের হয়ে যায়। এখন হচ্ছেনা? অতীতে হয়নি? হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। এ পথে যারাই হাঁটবেন বেইজ্জতি তাদের কপালে অনিবার্য। অসম্মান, অপদস্ততা তাদের থাকবেই। মানুষ কেন টাকার গোলাম হবে, সম্পদের গোলাম হবে? মানুষ তো আল্লাহর গোলাম হবে। মানুষ যখন আল্লাহর গোলাম হবে, প্রত্যেকটা মানুষ প্রত্যেকটা মানুষকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে। সে যে ধর্মেরই হোক না কেন। সেখানে ধর্ম দেখবে না। দেখবে তিনিও আমার মতো একজন মানুষ। আমার উচিৎ তাকে সম্মান করা। আমার উচিৎ তাকে ভালোবাসা।
জয়পুরহাটে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল নামে। দুপুর ১.৩০ মিনিটে সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টা থেকেই সামনে সারিতে জায়গা নেওয়ার জন্য এবং তাদের প্রাণ প্রিয় নেতাকে কাছ থেকে দেখার জন্য দলে দলে সম্মেলন স্থলে অবস্থান নেয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনতা। গোটা শহরজুড়ে জামায়াতের নিজস্ব ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক যানবাহন ও জনগণের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন সড়কে মোড়ে অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালন করে। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে পৃথক পৃথক ব্যানার-ফেসটন নিয়ে মিছিল সহ সম্মেলনে যোগ দেয়। নেতা-কর্মীদের মিছিলের শ্লোগানে শ্লোগানে গোটা শহর মিছিলে নগরীতে পরিনত হয়।