হসপিটালিটি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের নান্দনিক যাত্রায় স্থপতি অনির্বাণ সিনহা – আনন্দ আলো

হসপিটালিটি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের নান্দনিক যাত্রায় স্থপতি অনির্বাণ সিনহা – আনন্দ আলো

স্থপতি অনির্বাণ সিনহা আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হসপিটালিটি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিন থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি ডিটিসি লিমিটেডের ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির একজন অংশীদার। এছাড়াও তিনি এইজ অ্যান্ড এজ আর্কিটেকচার স্টুডিওর অংশীদার স্থপতিও। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার নকশা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পন্ন করেছেন। শাহ সিমেন্ট নির্মাণে তাঁর অবদান নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

দুই ভাই বোনের মধ্যে ছোট স্থপতি অনির্বাণ সিনহা। তাঁর বাবার নাম বীরেন্দ্রনাথ সিনহা। তিনি একজন চিকিৎসক। মা শিখা সিনহা গৃহিণী। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা এ জেড পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি এবং ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ভর্তি হন। ২০১০ সালে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর স্থাপত্য শিল্পের প্রতি গভীর আগ্রহ নিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন। প্রথমে খুলনার “বোস অ্যান্ড পার্টনারস” প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন এবং পরে ঢাকায় পাড়ি জমান।
গত এক দশকে তিনি দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য হসপিটালিটি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রকল্পে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে তিনি ডিজাইন ল্যাব আর্কিটেক্টসে যোগ দেন এবং লা মেরিডিয়েন হোটেলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি প্যান পাসিফিক সোনারগাঁও এক্সটেনশন প্রস্তাবনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ২০১৭ সালে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডে যোগ দিয়ে শেরাটন ঢাকা প্রকল্পে কাজ করেন, যা তাঁর পেশাদারিত্বে নতুন মাত্রা যোগ করে।


সম্পর্কিত

স্থপতি অনির্বাণ সিনহা

২০১৯ সালে ডিটিসি লিমিটেডের ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ভুটানের থিম্পুর পাঁচ তারকা ডুসিতডি২ ইয়ারকে হোটেলের অ্যানেক্স ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইন পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। এই প্রকল্প তাঁর জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং ভুটানের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ এনে দেয়, যার মধ্যে চাংগাংখা হোটেল উল্লেখযোগ্য। এই অভিজ্ঞতাগুলো স্থানীয় নান্দনিকতা এবং বৈশ্বিক বিলাসবহুল মানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ এবং দক্ষতার প্রতিফলন।
পরামর্শক স্থপতি হিসেবে অনির্বাণ সি এন এস টাওয়ার, সেরিন সুরাইয়া এবং সেরিন রাবেয়া প্রকল্পে কাজ করেছেন, যেখানে নান্দনিকতা, উপযোগিতা এবং স্থায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।
প্রোডাক্ট ডিজাইনের ক্ষেত্রেও তাঁর দক্ষতা প্রশংসনীয়। আসবাবপত্র নির্মাণশিল্পে স্থানীয়, কার্যকর ও সাশ্রয়ী সমাধান প্রদানের লক্ষ্যে তিনি কাজ করেছেন। হাতিল ফার্নিচারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পাশাপাশি বর্তমানে আয়ত ফার্নিচারের সঙ্গে প্রোডাক্ট ডিজাইন ও উন্নয়নের পরামর্শক হিসেবে যুক্ত আছেন। তিনি আসবাবপত্র উৎপাদন শিল্পে স্থানীয়, দক্ষ এবং সাশ্রয়ী সমাধান প্রদানের দিকে কাজ করেছেন এবং দেশীয় প্রযুক্তি ও সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে উচ্চমানসম্পন্ন প্রকল্পে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করছেন।
স্থাপত্য, প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও শিল্পের সংযোগস্থলে মানানসই ডিজাইন তৈরির গুরুত্ব অনির্বাণ গভীরভাবে অনুধাবন করেন এবং এই সংযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে চান। তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, স্থাপত্য কেবল নকশার শৈল্পিক প্রকাশ নয়, বরং এটি মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজতর করার একটি মাধ্যম। তিনি মনে করেন, প্রতিটি স্থাপত্যকর্মে প্রয়োজনীয়তা ও সৌন্দর্যের মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত। নতুন স্থপতিদের প্রতি তাঁর পরামর্শ হলো, স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা, যাতে স্থাপত্য শুধু বিল্ডিং ডিজাইনেই সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সামগ্রিক জীবনযাত্রার উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।
অনির্বাণ বাংলাদেশের জলবায়ু, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে গভীর সংযোগ রেখে প্রতিটি প্রকল্পে নিখুঁত সৌন্দর্য, কার্যকারিতা এবং টেকসই নকশার সমন্বয় ঘটান। তাঁর স্থাপত্য দর্শন কেবলমাত্র নির্মাণশিল্পের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি স্থাপত্যশিল্পের মাধ্যমে মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার এক অনন্য প্রচেষ্টা। তাঁর যাত্রা প্রতিশ্রুতি, উদ্ভাবন এবং গুণগত মানের এক অসাধারণ উদাহরণ হয়ে উঠেছে।



Scroll to Top