কিয়েভ, ২০ ডিসেম্বর – অভিযানরত রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে নিজেদের বাহিনীতে আরও ৫ লাখ নতুন সেনাসদস্য চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের অন্তত সাড়ে চার লাখ থেকে ৫ লাখ সেনা প্রয়োজন। অবশ্য আমি জানি যে এই মুহূর্তে এটা বেশ কঠিন এবং ব্যায়বহুল।’
তবে তিনি বলেছেন, এখন থেকে বাহিনীতে সেনা নিয়োগের সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের বিস্তারিত তথ্য নিজ দপ্তরে চান তিনি। সেই সঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছেন, বর্তমানে ইউক্রেনীয় বাহিনীতে ৫ লাখ সেনা রয়েছে।
‘আমি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বিষয় জানতে চাই। ইউক্রেনীয় বাহিনীর লাখ লাখ সেনা সদস্যের কী হবে। গত দু’বছর ধরে যারা যুদ্ধ করছে তারা কী অবস্থায় আছে? সেনাদের পালাক্রমে কাজ করানো এবং তাদের ছুটি প্রদানের ব্যাপারটিও গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় এখন আমাদের একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার ভ্যারেলি জালুঝনির সঙ্গে জেলেনস্কির দ্বন্দ্ব ছিল। তবে বর্তমানে সেই দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে— ইঙ্গিত দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা একটি কার্যকর পেশাদার সম্পর্কের মধ্যে রয়েছি।’
যুদ্ধের ময়দানে নারীদের নিয়ে আসা হবে কি না— প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, এমন কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।’
এমন এক সময়ে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করলেন, যখন এই যুদ্ধে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আসা অর্থ ও অস্ত্র সহায়তার প্রবাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে ইউক্রেনের জন্য ইইউ’র বরাদ্দ ৬ হাজার কোটি ডলারের অর্থ সহায়তা আটকে দিয়েছে জোটের অন্যতম সদস্য হাঙ্গেরি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে—আপাতত ইউক্রেনকে ১০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া যাবে, তবে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেস সহযোগিতা না করলে পরবর্তী সহায়তা কবে পাঠানো সম্ভব হবে— তা অনিশ্চিত।
এদিকে ভলোদিমির জেলেনস্কির স্ত্রী এবং ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলগা জেলেনস্কা গত মাসে বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব সহায়তার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে মারাত্মক বিপদে পড়বে ইউক্রেন।
সহায়তার সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গৃহীত ‘পাল্টা আক্রমণ’ (কাউন্টার অফেন্সিভ) কৌশলের চরম ব্যর্থতা এবং ইউক্রেনের সরকারি ও সেনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি।
এদিকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর গোলাবারুদের মজুত তলানিতে ঠেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে গেলাবারুদের সরবরাহও অনিয়মিত। তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, আপাতত গোলার বিকল্প হিসেবে বিস্ফোরকভর্তি ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
‘আশা করছি, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি ড্রোন আমরা প্রস্তুত করতে পারব।
মঙ্গলবার কিয়েভে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলেনস্কি, তা সরকারিভাবে ঘোষিত ছিল না। প্রেসিডেন্টর দপ্তর থেকে ইউক্রেন এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমকে চিঠি দিয়ে এই সংবাদসম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিবিসির সাংবাদিক জেসিকা পার্কার। তিনি প্রশ্ন করেন, ইউক্রেন এই যুদ্ধে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে— এ তথ্য সঠিক কি না।
উত্তরে জেলেনস্কি বলেন, ‘না, সঠিক নয়।’
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ২০ ডিসেম্বর ২০২৩