স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: মহাষষ্ঠী পুজার মধ্য দিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবী আসার ঘণ্টা বেজেছে মহালয়ার দিন (১৪ অক্টোবর) থেকেই।
সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন- বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন-দুঃখের মধ্য দিয়ে যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি সবার কষ্ট দূর করেন। এ বছর ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দুর্গা আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, আর দশমীর দিন বিদায় নেবেন একই বাহনে।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হবে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এদিন ষষ্ঠী, সায়ংকালে দুর্গাদেবীর বোধন, আমন্ত্রণ এবং অধিবাস হবে। বোধন মানে জাগ্রত করা বা জাগানো। বোধন হয় বেল গাছের তলায়। দেবতারাও বেল গাছের তলায় বোধন করেছিলেন। এ গাছের অন্য নাম শ্রীবৃক্ষ। শ্রী অর্থ সম্পদ বা সৌন্দর্য। তাই পুরোহিতরা সম্পদ বা সৌন্দর্য বা সংসারের উন্নতির জন্য, জ্ঞান-ভক্তি লাভের জন্য বেল গাছের মূলে দুর্গাপূজার বোধন করেন। বোধনে ঘট স্থাপন করা হয়। ঘট হলো হৃদয়ের প্রতীক। ঘটের জলে যেমন প্রতিবিম্ব পড়ে, সে রকম ভক্তের হৃদয়েও মায়ের ভাব বা স্বরূপের ধারণা হয়। সেই ধারণা অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি হয়।
মহালয়াতেই দেবীর আগমনের ঘণ্টা বাজে, আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। আগামী শনিবার (২১ অক্টোবর) মহাসপ্তমী, রোববার (২২ অক্টোবর) অষ্টমী, সোমবার (২৩ অক্টোবর ) মহানবমী এবং মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমীর মাধ্যমে বিদায় নেবেন দুর্গা দেবী।
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
পুরান ঢাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জমজমাট দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা ও মহাপ্রসাদ বিতরণের পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, আরতি প্রতিযোগিতা, বস্ত্র বিতরণ, স্বেচ্ছা রক্তদান অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপ, গুলশান বনানী সর্বজনীন পূজা পরিষদ মণ্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, শাঁখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ বিভিন্ন মণ্ডপে দুর্গোৎসবের ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এবার সারা দেশে মণ্ডপের সংখ্যা ৩২ হাজার ৪০৭টি। রাজধানীতে ২৪৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
সারাবাংলা/আরএফ/এনইউ