এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পূর্ব তিমুরের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। তবে চুক্তির বাইরে, আমরা নিশ্চিত করছি যে আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে এবং প্রসারিত হবে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস এই কথা বলেন।
তিনি বলেন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে সব বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীকে তার দেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্ককে আরও বৃদ্ধির জন্য উৎসাহিত করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস স্মরণ করেন যখন তিনি প্রথমবার পূর্ব তিমুর সফর করেছিলেন, তখন তিনি দেখেছিলেন যে বাংলাদেশের অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সেই দেশের গ্রামের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে। এখনও অনেক বাংলাদেশি সেখানে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ তিমুরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশটির শিগগিরই আসিয়ান ফোরামের সদস্য হবে এবং পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছেন যে, আসিয়ান সদস্য হিসেবে তার দেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সমর্থন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, তারা উভয় নেতা আলোচনা করেছেন কীভাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সম্ভব এবং এই বিষয়ে তিমুরের আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থন চেয়েছেন।
বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তাকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান ড. ইউনূস। এসময় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের আত্মত্যাগ ও তাদের সমর্থকদের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা তার সম্মান জানাতে হবে।
বৈশ্বিক শান্তিতে তিমুরের প্রেসিডেন্টের অবদানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ১৯৯৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী রামোস-হোর্তা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মহান লেখক। তিনি শুধু পূর্ব তিমুরের জনগণের জন্য নয়, বরং সারাবিশ্বের মানুষের জন্য কাজ করেন।
রামোস-হোর্তার বন্ধু হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন যখন রামোস-হোর্তা নোবেল পুরস্কারের সমস্ত অর্থ ক্ষুদ্রঋণের জন্য দান করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস জানান, রামোস হোর্তা তাকে ক্ষুদ্রঋণ প্রচারের জন্য পূর্ব তিমুরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রামোস হোর্তাকে ক্ষুদ্রঋণের একজন ভালো বন্ধু বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আগের সরকারের রোষানল থেকে তাকে রক্ষা করার জন্য ১০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তি বারবার বিবৃতি দিয়েছেন। রামোস-হোর্তা সেই বিবৃতিতে প্রথম বা দ্বিতীয় স্বাক্ষরকারী। তিনি উল্লেখ করেন যে, পূর্ব তিমুরের জন্ম বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কিত। এই দেশটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি হয়েছিল।
তৎকালীন জাতিসংঘ মিশনের বিশেষ প্রতিনিধি আমীরা হকের ভূমিকা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী পুলিশ বাহিনী পূর্ব তিমুরে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
তিনি জানান, ২০০৪ সালে আমীরা হকের আমন্ত্রণে পূর্ব তিমুরে সফরের সময় তিনি দেখেছিলেন কীভাবে বাংলাদেশিদের প্রতি সম্মান দেখানো হয়। তিনি বলেন, সেই সময় বাংলাদেশিরাই দেশটি কার্যত চালাচ্ছিল।