এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অস্বাভাবিক হরে। গত এক বছরে দেশে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৩৮ এইডস রোগী। এ সংখ্যা বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। একই সময়ে এতে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৭৭ শতাংশ, নারী ২২ শতাংশ, হিজড়া ১ শতাংশ। মৃতদের একটি বড় অংশের বয়স ৬০ বা তার বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সমকামী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইডসে আক্রান্তের হার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার নিশ্চিত হলে; এইচআইভি/এইডস যাবে চলে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসটিডি বা এইডস শাখার তথ্যমতে, দেশের আট বিভাগে নতুনভাবে সংক্রমিতদের সংখ্যা ঢাকায় ৪০৬ জন, চট্টগ্রামে ৩২৬, খুলনায় ১৫৪, রাজশাহীতে ১৪৭ এবং অন্যান্য বিভাগে ৪৪ থেকে ৮৬ জন।
চলতি বছরের এ পর্যন্ত সময়ে মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশের বেশিই সমকামী ও হিজড়া। এ বছরে পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ লাখের বেশি। মূলত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, টিবি রোগী, এএনসি চেক আপ, কারাগারের বন্দি, সম্ভাব্য মধ্যপ্রাচ্যগামীদের এই পরীক্ষা করা হয়।
বিভাগ হিসেবে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চসংখ্যক এইচআইভি রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ২০২৪-এ প্রায় ১৫০ জন নতুন করে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আর প্রায় ১ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা এইডসের চিকিৎসা নিচ্ছেন। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, কক্সবাজার কারাগার ও আইওএম ক্লিনিকের মাধ্যমে তারা এ চিকিৎসা পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর টিবিএল ও এইডস বা এসটিডি প্রোগ্রাম ডা. মাহফুজার রহমান সরকার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের পরীক্ষা করার সক্ষমতা বেড়েছে। তাই পরীক্ষা বেশি হওয়ায় শনাক্তও হয়েছে বেশি। তাই সংক্রমণ বেড়েছে, সেটা বলা যাবে না। তা ছাড়া আক্রান্তদের চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। তাই রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার বেশি। ১১ হাজার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে ১১০ জন এইচআইভি আক্রান্ত। এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামে এইচআইভি প্রতিরোধে সচেতনতা অন্যতম। সংক্রমিত ব্যক্তি পরিবারের প্রিয়জনের কাছেও নিজের রোগের কথা প্রকাশ করতে চান না। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আচার-আচরণগত দিক থেকে এইচআইভিতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, শিরায় মাদকদ্রব্য গ্রহণকারী, সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়—সে বিষয়ে বেশি প্রচার চালাতে পারলে সচেতনতা বাড়বে। এতে স্টিগমা অনেকটাই কমে যাবে।
এইডস বা এসটিডি প্রোগ্রামের তথ্যমতে, বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার ৬৯। চার বছর ধরে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। ১৯৮৯ থেকে (দেশে যখন প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়) ২০২০ সাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৩২, ২০২১ সালে ৮ হাজার ৭৬১, ২০২২ সালে ৯ হাজার ৭০৮ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা পৌঁছে ১০ হাজার ৯৮৪ জনে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, হিজড়া, সমকামী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি শনাক্তের প্রবণতা বেশি। কারণ তারাই বেশিরভাগ সময় বৈষম্যের শিকার হন। এই বৈষম্য স্বাস্থ্য সেবায়ও প্রকট। কুসংস্কার, ভয় ও লজ্জার কারণে যেন এই ব্যক্তিরা চিকিৎসা সেবা থেকে হারিয়ে না যান, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। তা না হলে তাদের মাধ্যমে নতুন ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে।