পেশাগত ত্রুটির জন্য দুঃখপ্রকাশ করে এসএস পাওয়ার নিয়ে ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে নিল ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার।
শনিবার ‘SS power rejoinder: The Daily Star retracts story’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দৈনিকটি এই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ‘যথাসাধ্য চেষ্টা’ করবে বলেও জানায়। এর আগে ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘S Alam nexus laundered $815 million through two LCs’ শিরোনামে প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টার।
এ সম্পর্কে ডেইলি স্টার জানায়, ‘এসএস পাওয়ার নিয়ে আমাদের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্যগুলো গত কয়েকদিন ধরে পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে, আরও ভালোভাবে এই তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রূপালী ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের প্রতিবেদনে অন্তত ৪৬ বার এই এলসি সম্পর্কিত ভুয়া চালান নম্বর এবং তারিখ আপলোড করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারে ভুল তথ্য এন্ট্রির বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের স্বীকারোক্তি, রুপালী ব্যাংক ও এসএস পাওয়ারের প্রতিবাদের বিষয় এবং আমাদের পত্রিকায় প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি আমরা এখনও পর্যালোচনা করছি। সাংবাদিকতার নীতি অনুযায়ী, এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সব ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিবেদনটি দ্রুতই সরিয়ে নিচ্ছি।’
২৬ সেপ্টেম্বরের প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে প্রতিবাদ জানিয়েছে এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও রূপালী ব্যাংক।
ডেইলি স্টার জানায়, ‘আমরা আমাদের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত অফিসিয়াল তথ্যগুলো গত কয়েকদিন পর্যালোচনা করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এবং রূপালী ব্যাংকের কিছু অফিসিয়াল তথ্য আমাদের আরও যাচাই করার প্রয়োজন ছিল।
আরও পড়ুন: বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত করতে এসএস পাওয়ার নিয়ে অপপ্রচার
রূপালী ব্যাংকের সেসব কর্মকর্তারা আমাদের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত এলসি-সম্পর্কিত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে আপলোড করেছিলেন তাদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আমরা বসেছিলাম।
মূলত তাদের ও অন্যান্য অফিসিয়াল তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। এই বৈঠকে আমাদের প্রশ্নের জবাবে, রূপালী ব্যাংক লিখিতভাবে নিশ্চিত করেছে, তার কর্মকর্তারা ‘অনবধানতাবশত ৪১টি ভুল চালানের তারিখ এবং ৫টি ভুল চালান নম্বর আপলোড করেছে’। এসএস পাওয়ারের অর্থ পাচারের দাবি সম্পর্কে এত বড় ভুল তথ্য আমাদের বিভ্রান্ত করায় আমরা প্রতিবেদন করি। তবে আমরা এখন বুঝতে পেরেছি, আমরা ভুল করেছি।
আমরা আন্তরিকভাবে এই পেশাদার ত্রুটির জন্য দুঃখিত। অফিসিয়াল তথ্য ভুল থাকলে মাঝে মাঝে এমন ঘটে। এমনকী ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে কিংবা নৈতিক সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ মান অনুসরণ করলেও কখনো কখনো আমরা ভুল করে ফেলি। আমরা আমাদের ভুলের দায় নিচ্ছি এবং সংশোধন করছি । পাশাপশি এসএস পাওয়ার লিমিটেড এবং আমাদের পাঠকদের কাছে আমরা আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
৩ অক্টোবর, রাত ৮টার দিকে রূপালী ব্যাংক ভুল তথ্য এন্ট্রির বিষয়টি নিশ্চিত করার আধঘণ্টার মধ্যে আমরা আমাদের সমস্ত ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলি এবং অপসারণের বিষয়ে পাঠকদের অবহিত করে আমাদের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করি। আমরা এখন আমাদের প্রিন্ট সংস্করণ থেকে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
আমরা উল্লেখ করতে চাই, নিবন্ধটি সরল বিশ্বাসে প্রকাশ করা হয়েছিল। ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্যে নয়। আমাদের ৩৩ বছরের সাংবাদিকতায় আমরা কখনই ইচ্ছাকৃত এমন ভুল করিনি। আমরা যে তথ্য ব্যবহার করেছি তা আমাদের নিজস্ব তথ্য ছিল না। সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এবং রূপালী ব্যাংকের সার্ভারের অফিসিয়াল তথ্য ছিল। এক্ষেত্রে আমরা ভুলভাবে উপস্থাপিত তথ্যের শিকার হয়েছি।
আমরা আমাদের পাঠকদের আশ্বস্ত করতে চাই, এই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দৈনিক খবরের কাগজে ‘এসএস পাওয়ার নিয়ে ষড়যন্ত্র, বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্তের শঙ্কা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, এসএস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেড (এসএসপিওয়ানএল) দেশের বেসরকারি খাতে একমাত্র বৃহৎ যৌথ (চীন-বাংলাদেশ) বিনিয়োগী কোম্পানি। ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে প্রায় ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে আসছে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানাটির বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে বলে এর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে।
অভিযোগে বলা হয়, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার ছাপা কপি, অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ন্যক্কারজনকভাবে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানাটিকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।