অংকিতা চৌধুরী
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম হলো শরীর ও মনের ব্যায়াম। শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে যোগব্যায়াম বিশেষভাবে কার্যকরী- এটি নানাভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম চর্চার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য ধরে রাখতেও ইয়োগা অতুলনীয়। শুধু তাই নয়, নিয়মিত যোগাসন করে বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিদিন সকাল বা সন্ধ্যায় নিয়মিত যোগব্যায়াম শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। এতে ওজন কমে, শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে, হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি যোগব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ন প্রভাব পড়ে মনের ওপর।
যোগব্যায়াম নিয়মিত চর্চা করলে কাজে সন্তুষ্টি বাড়ে, কাজকে উপভোগ করা যায়। কারণ যোগব্যায়াম মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও মনোযোগ বসাতে সাহায্য করে। মনের সম্পৃক্ততায় একমাত্র ব্যায়াম এটি। তাই যে কারো ব্যক্তিত্ব ও লক্ষ্য ঠিক করতে ইয়োগার উপায়গুলো বেশ কার্যকর। এটিই একমাত্র ব্যায়াম যা প্রত্যেকের লক্ষ্য অর্জনে কিছু না কিছু অবদান রাখতে পারে। যোগব্যায়ামের প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা সঞ্চারের ক্ষমতা রয়েছে। শুধু ভালো থাকাই নয়, খেলাধুলা অথবা অন্যান্য কাজে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে যোগব্যায়ামের গুরুত্ব রয়েছে।
শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য
যারা নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন তারা কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে শারীরিক নড়াচড়ায় অস্বস্তি অনুভব করেন না, কারণ যোগব্যায়াম চর্চায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নমনীয় হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যোগব্যায়াম চর্চা ও অনুসরণকারীরা পিঠ ও হ্যামস্ট্রিংয়ের বিভিন্ন চোটে কম আক্রান্ত হন। নিয়মিত ইয়োগার চর্চায় শারিরীক পরিশ্রমের কাজে কাহিল হওয়ার হার কমে। শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যতার কারণে কঠিন কাজ হাতে নেওয়ার উৎসাহ বেড়ে যায়।
রক্ত চলাচল ঠিক রাখা
ইয়োগা শরীরে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতেও ভুমিকা রাখে। এজন্য ইয়োগায় উত্তরাসন পদ্ধতিতি বেশ কার্যকর। এ ধরণেল ব্যায়ামের জন্য প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হয়। এরপর শরীরের ওপরের অংশ নিচে ঝুঁকিয়ে হাত দিয়ে পায়ের পেছনে স্পর্শ করতে হয়। ৫ সেকেন্ড এভাবে থেকে আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে হয়। এভাবে প্রতিদিন ৫ বার উত্তরাসন ব্যায়ামটি করলে শরীরে ও মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে।
ফুসফুসের ব্যায়াম
যোগব্যায়াম মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। ফুসফুসের ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে রক্ত সংবহন বাড়িয়ে দেয়। এজন্য যোগের একটি অন্যতম ব্যায়াম হলো প্রাণায়াম। এই ব্যায়াম করতে প্রথমে সোজা হয়ে বসতে হয়। এরপর ধীরে ধীরে নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে একইভাবে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হয়। এভাবে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ বার প্রাণায়াম করলে ফুসফুসসহ দেহের অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
ওজন ও হৃদরোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ
ওজন ও হৃদরোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যোগব্যায়াম। দীর্ঘ সময় অফিসের কাজে চোখ, ঘাড়, কাঁধ, পিঠ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে যে ব্যথা হয়, সেগুলো থেকে মুক্তি দেয় ইয়োগা। এই ব্যায়াম ঘুমের সমস্যা দূর করে মানসিক শান্তি বাড়ায়। স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে শরীরের বিশ্রাম এবং হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। হাঁচি-কাশি নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখে যোগব্যায়াম। এছাড়া উদ্বেগ দূর করতে, শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং শক্তিশালী শরীর গঠনে ইয়োগা অতুলনীয়।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও অহেতুক আতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে যোগব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকর। নিয়মিত যোগব্যায়াম শ্বাসকষ্টের মতো অনেক সমস্যাই রুখে দিতে পারে। যোগব্যায়াম যারা কেবল শুরু করেছেন তারাও মনে প্রশান্তি অনুভব করতে পারেন। যোগব্যায়ামের শুরু থেকেই আপনি শরীর ও মনে শিথিলতা অনুভব করতে শুরু করবেন এবং মন সতেজতায় উদ্দীপ্ত হতে থাকবে। সময় পরিক্রমায় যোগব্যায়াম চর্চাকারীরা শরীর-মন চর্চার এ ব্যায়ামে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং যোগের পাশাপাশি শ্বাস নিয়ন্ত্রণের প্রণালীর ওপর মনযোগী হন।
ইতিবাচক মনোভাব তৈরি
নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে আত্মবিশ্বাস ও স্থিরতা ফিরে আসে। ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। এতে শরীরের মতো মনেরও যত্ন নেওয়া হয়। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে মনকে শান্ত রাখতেও তাই অনেকে ইয়োগা করেন।
সারাবাংলা/এসবিডিই