দিনে এক চিমটি কালিজিরা গ্রহণের উপকার

দিনে এক চিমটি কালিজিরা গ্রহণের উপকার

লাইফস্টাইল ডেস্ক

রান্নাঘরের দরকারি মসলার মধ্যে কালিজিরা অন্যতম। প্রাকৃতিক ঔষধি হিসেবেও কালিজিরা বেশ জনপ্রিয়। কালিজিরাতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নানা রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। দিনে এক চিমটি কালিজিরা জ্বর, সর্দি, গায়ে ব্যথাকে দূরে রাখে।

শুধু এটুকুই নয়, গবেষণা বলছে কালিজিরার সবচেয়ে বড় গুণ ওজন কমাতে। সঠিক নিয়মে ও পরিমিত পরিমাণে কালিজিরা খেলে ওজন কমে যায়। আসুন জেনে নেই, ওজন কমানোসহ নানা সমস্যায় কালিজিরার উপকারিতা সম্পর্কে-

কালিজিরা ওজন কমায়

কালিজিরা উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ। তাই কালিজিরা খেলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধার অনুভূতি থাকে না। ফলে বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। রান্নায় কালিজিরা ব্যবহার করলে খাদ্যের পুষ্টিগুণও বাড়ে। তাই রান্নায় কালিজিরা ব্যবহার করুন। কালিজিরা গুঁড়া ভাতের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন।

স্থূলতা রুখতে গ্রিন টির সঙ্গে মিশিয়ে নিন কালিজিরার গুঁড়া। এতে বিপাক প্রক্রিয়া ভাল হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরের মেদ ঝরাতে বিশেষ কাজে আসে এই ঘরোয়া কৌশল।

পেটের জন্য উপকারি

কালিজিরা পেটের জন্য ভাল। কালিজিরা ভেজে গুঁড়া করে নিন। এবার আধা-কাপ ঠাণ্ডা করা দুধে এই কালিজিরা এক চিমটে মিশিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন খান। পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাদের জন্য কালিজিরা খুব উপকারি। কালিজিরা হজমেও সাহায্য করে। ক্ষুধামন্দা দূর করে। নিয়মিত কালিজিরা খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়।

ঠান্ডাভাব কমায়

সর্দি-কাশি দূর করতে কালিজিরার ব্যবহার নতুন কিছু নয়। কালিজিরা গুঁড়া করে সরিষার তেল ও লবণ দিয়ে মেখে ভর্তা হিসেবে খেতে পারেন। এছাড়া কালিজিরা ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন। একটি পাতলা কাপড়ে সামান্য কালিজিরা জড়িয়ে তা নাকের কাছে নিয়ে বড় করে শ্বাস টানুন কিছুক্ষণ। একটু ঝাঁজ লাগবে। তবে সর্দি কমে যাবে দ্রুত। ঠান্ডার কারণে যাদের শ্বাসকষ্ট হয়, তারা এভাবে নিয়মিত কালিজিরা ব্যবহার করতে পারেন।

বৃষ্টি ভেজার ফলে সর্দি-কাশি থেকে বুকে চাপ লাগলে কালিজিরা তেল গরম করে বুকে ও পিঠে মালিশ করে চাদর গায়ে থাকুন কিছুক্ষণ। বার কয়েক করলেই কষ্ট কমবে। কাশির প্রকোপ থেকেও রক্ষা পাবেন অনেকটাই।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

রক্তে কোলেষ্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কালিজিরা। ফলে উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে সপ্তাহে একদিন কালিজিরার ভর্তা রাখুন ডায়েটে। কালিজিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তচাপের ওষুধের সঙ্গে এই পথ্য বিশেষ কার্যকর।

এছাড়া কালিজিরা রক্ত চলাচল ঠিক রাখে। নিয়মিত কালিজিরা খেলে দেহে রক্ত চলাচলের মাত্রা ঠিক থাকে। এতে হৃদযন্ত্র ভাল থাকে। মনোযোগ ধরে রাখতেও সাহায্য করে এটি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যারোটিন থাকায় তা অ্যান্টিক্যানসার হিসেবেও খাদ্যমহলে জনপ্রিয়।

শ্বাসকষ্টে উপকারী কালিজিরা

শ্বাসকষ্টের সমস্যা হঠাৎ মুশকিলে ফেললে সব সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অবস্থা থাকে না। অনেক সময় হাতের কাছে দরকারি ওষুধও থাকে না। কালিজিরা কাপড়ে জড়িয়ে রাখুন। এ বার নাকের কাছে নিয়ে এর গন্ধ শুঁকুন। শ্বাসকষ্টের কষ্ট থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে এই ঘরোয়া উপায়।

কালিজিরা তেল চুল পড়া ঠেকায়

যাদের অতিরিক্ত চুল পড়ে তারাও এই তেল মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। এক চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ কালিজিরার তেল মিশিয়ে গরম করে নিন। মাথায় ত্বকে এই তেল কুসুম গরম অবস্থায় মালিশ করুন। এক সপ্তাহ টানা এমন করলে চুল পড়ার সমস্যা মিটবে অনেকটাই।

আরও নানা কাজের কাজী

ঠান্ডার সমস্যায় গলা ও বুকে কালিজিরা তেল লাগাতে পারেন। এছাড়া শরীরের যেকোন জায়গার আঘাতজনিত ব্যথায় কালিজিরা তেল উপকারি। দীর্ঘমেয়াদি মাথার যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে কালিজিরা তেল কপালে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়। কালিজিরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ফসফরাস। তাই জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে কালিজিরা খান নিয়মিত।

সতর্কতা

‘সকল রোগের মহৌষধ’ হিসেবে কালিজিরার জুড়ি নেই। শারীরিক যে সমস্যার কারণেই কালিজিরা খান, তা সঠিক পরিমাণে হওয়া চাই। প্রতিদিন কতটুকু কালিজিরা খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে তা চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভবতী নারীদের কালিজিরা খাওয়া উচিত না। এতে গর্ভের শিশুর মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া শারীরিক বিশেষ কোন সমস্যার কারণে চিকিৎসক কালিজিরা খেতে নিষেধ করলে অবশ্যই তা মেনে চলা উচিত।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Scroll to Top