অপার্থিব অনুভূতির ইহরাম

অপার্থিব অনুভূতির ইহরাম

জহির উদ্দিন বাবর

‘হজ’ শব্দটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি শুভ্র অবয়ব চোখের সামনে ভেসে ওঠে। হজ ও ওমরা করার জন্য এই কাপড় গায়ে জড়াতে হয় পুরুষদের। মিকাত বা নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করতে হয় এই কাপড় গায়ে জড়িয়ে। এটাকে বলা হয় ইহরাম। জীবনে যারা একবার হলেও এই কাপড় গায়ে জড়িয়েছেন তারাই বুঝবেন এর অনুভূতি কী রকম!

সাদা এই কাপড়টি পরার পর মুমিনের মনের অবস্থা আমূল পাল্টে যায়। দুনিয়ার অন্য সবকিছুর কথা ভুলে তখন সেই মুমিন তার স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। নারীরা অবশ্য স্বাভাবিক পোশাকেই ইহরামের নিয়ত করেন। এই নিয়তের মধ্য দিয়ে তাদের মনেও অন্যরকম এক অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেই মুহূর্তের অপার্থিব অনুভূতিটা কাউকে ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না। সেই মুহূর্তটি যাদের জীবনে একবার হলেও এসেছে তারাই কেবল বুঝবেন।

হজ মূলত একটি প্রেমময় সফর। এটি আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক উন্নয়নের অভিযাত্রা। পার্থিব জীবনে স্রষ্টাকে দেখা, তার সান্নিধ্য লাভ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের হৃদয়ের আকুলতা, প্রেম-উচ্ছ্বাসের অভিব্যক্তি প্রকাশের প্রতীকী ব্যবস্থা এই হজ। এর প্রতিটি বিধানে প্রেমিক ও প্রেমাস্পদের মধ্যকার অকৃত্রিম সম্পর্কের পরিচয় ফুটে ওঠে। স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ পায়।

আল্লাহর ঘরের মেহমানরা যখন সেলাইবিহীন দুই টুকরো শুভ্র কাপড়ে জড়িয়ে ইহরাম বাঁধেন তখন তা তাদেরকে নিত্যদিনের সাজসজ্জা ও চাকচিক্যের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে নিয়ে যায় প্রেম ও বিশ্বাসের নতুন জগতে। ইহরামের এই অনাড়ম্বর অথচ মহিমান্বিত আচ্ছাদন হজযাত্রীদের সচেতন করে তোলে। আমি এখন মহান স্রষ্টার দরবারে হাজির-সেই অনুভূতি জাগায়। উসকো-খুশকো চুল নিয়ে ধুলি ধূসরিত অবস্থায় মাওলার দরবারে হাজির হবেন-এটাই তো প্রেমের দাবি। হজে এই দাবি যথার্থভাবেই পূর্ণতা পায়।

হজযাত্রী তার অবয়ব ও আচরণেই শুধু নিজের আনুগত্যের প্রকাশ ঘটান না, জবানের স্বীকৃতিও দিয়ে থাকেন। ইহরাম বাঁধার পর থেকে তার মুখে জারি হয়ে যায় একটি জিকির- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…।’ ‘প্রভু হে বান্দা হাজির! সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামত তোমার। রাজত্ব ও ক্ষমতা তোমারই। তোমার কোনো শরিক নেই।’ হজযাত্রী যত এই তালবিয়া পাঠ করবেন তত তার বিশ্বাসের ভিত মজবুত হবে।

পবিত্র হজের উদ্দেশ্যে কেউ যখন গায়ে ইহরামের কাপড় পরে তখন তার মনে পড়ে যায় আখেরাতের সফরের কথা। এভাবেই একদিন সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে তাকে শুরু করতে হবে আখেরাতের সফর। দুনিয়ার গরিব-ধনী কেউই ওই সফর থেকে বাদ পড়বেন না। সেই সফরের আগে পরকালের প্রস্তুতির জন্য এই হজের সফর অনেকটাই সহায়ক। কেউ চাইলে পরকালের সফরের যাবতীয় পাথেয় সংগ্রহ করতে পারেন হজযাত্রায়। সঠিকভাবে হজ পালন করলে পাপমুক্তির গ্যারান্টি রয়েছে। হজের সফর থেকে ফিরে বাকি জীবন এই শিক্ষার ওপর কাটাতে পারলে পরকালে অবশ্যই মুক্তি মিলবে।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

Scroll to Top