অংকিতা চৌধুরী
মাংস আয়রন ও প্রোটিনের ভালো উৎস হলেও ‘রেড মিট’ বা লাল মাংস রয়েসয়ে খাওয়াই শ্রেয়। কারণ লাল মাংসে সাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে প্রচুর পরিমাণে থাকার কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ইদে গরু, খাসি বা যে কোনো ধরনের লাল মাংস একটু বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে কিংবা হৃদপিণ্ডের সমস্যা আছে তাদের জন্য লাল মাংস খাওয়া খুবই ক্ষতিকর। লাল মাংস ওজন বাড়ায় এবং রক্তের কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়।
ফলে বেশি মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, গ্যাসট্রিক এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই লাল মাংস পরিমিত খাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করলে লাল মাংস খেয়েও থাকতে পারবেন সুস্থ। লাল মাংসের স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না সম্পর্কে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন, গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স এর খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফারহা আমিন।
মাংসে ক্যালরি বেশি থাকায় তা শক্তি সরবরাহে সহায়তা করে। এছাড়াও মাংসে ভালো পরিমাণে খনিজ-পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম থাকে। চর্বিহীন মাংসে ক্লোরাইড, বাইকার্বোনেট ও অ্যাসিড ফসফেট থাকে যা দেহ সুরক্ষিত রাখে। গরুর মাংসে প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ৬৭ শতাংশ জলীয় অংশ থাকে। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসতে ১৮০ কিলোক্যালরি, ১৪ গ্রাম চর্বি, ২১ গ্রাম প্রোটিন, ৬ মিলি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ২.৩ গ্রাম লৌহ থাকে। এছাড়াও এতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ভালো পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে ।
লাল মাংস রান্না ও খাওয়ার স্বাস্থ্যকর উপায়
* ভালোভাবে সেদ্ধ করতে মাংস ছোট টুকরা করে কাটুন। মাংসের টুকরা আকারে বড় হলে তা অল্প তাপে বেশিক্ষণ ধরে রান্না করতে হবে। আর টুকরার আকার ছোট হলে তা একটু বেশি তাপেও রান্না করা যায়।
* মাংস রান্নার আগে কেটে ভালো মতো পরিষ্কার করে নিতে হবে। চিকন ও ধারালো ছুরির সাহায্যে মাংসের ভিতরের অংশের চর্বি আলাদা নিন।
* রান্নার আগে মাংস ভালোমতো ধুয়ে নিন। তবে মনে রাখতে হবে মাংস অতিরিক্ত বা বার বার ধোয়া হলে এর স্বাদ নষ্ট হয়। তাই কুসুম গরম পানি দিয়ে শেষ বার মাংস ধুয়ে নিলে বাড়তি তেল কমে যায়।
* রান্নার আগে মাংস মেরিনেইট করে নিলে রান্নার সময় কিছুটা কমে আসে। মাংস রান্না করার সময় এমনিতেও অনেক বাড়তি তেল বের হয়। তাই মাংস রাঁধতে অল্প তেল দিন। লো কোলেস্টেরল তেল ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি কিছুটা হলেও কম হবে।
* মাংস রান্না করতে হয় মাঝারি বা কম তাপে। অল্প তাপে বেশিক্ষণ সময় নিয়ে মাংস রান্না করলে তা হাড়সহ নরম হয়। এতে মাংস ঠিক মতো সুসিদ্ধ ও সহজপাচ্য হয়। উচ্চতাপে মাংস রান্না করলে তা বেশি আঁশালো ও শক্ত হয়ে যায় ফলে স্বাদ অনেকটাই কমে আসে।
* মাংস রান্নায় ঘি, মাখন অথবা তেল বেশি ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে সিরকা বা টক দই দিয়ে মেরিনেইট করে রান্না করা ভালো। এইভাবে রান্না স্বাস্থ্যকর এবং সহজপাচ্য হয়।
* বাড়িতে উচ্চ রক্তচাপ ও কেলেস্টেরলের রোগী থাকলে মাংস রান্নার নানান ধরনের সস, অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করবেন না। সেক্ষেত্রে কাঁচা পেঁপে, নানান মসলা, সিরকা ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
* রান্নার পর মাংস ঠাণ্ডা হয়ে গেলে উপরে যেই চর্বির আস্তরণ জমে সেটা তুলে ফেলে দিন। এতে মাংসের চর্বি অনেকটাই কমে যাবে।
* মাংস গ্রিল কিংবা ঝলসে খেলে চর্বি অনেকটাই ঝরে যায়। বাড়তি চর্বি ঝরে যাওয়াতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি কিছুটা কম হয়। তবে ঝলসে খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন মাংস ভালো করে সেদ্ধ হয়। সেদ্ধ না হলে নানা ধরনের জীবাণু রয়ে যেতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
* অনেকেরই মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। তাই মাংসের সঙ্গে কাঁচা সবজি, সালাদ, প্রচুর পরিমাণে পানি, ফলের রস, ইসুবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার খান। সমস্যা কমে আসবে।
* মাংস খেতে বসার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। বাড়তি মাংস খাওয়ার ইচ্ছে চলে যাবে। আর মাংস খেয়ে ক্যালরির পরিমাণ যেন বেড়ে না যায়, সেজন্য প্রতিদিনের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা বাড়তি সময় হাঁটুন কিংবা ব্যায়াম করুন।
সারাবাংলা/এসবিডিই