এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
সম্প্রতি এক হামলার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বলেছেন, সেখানে কারও দেহে ট্যাটু থাকলে তার চামড়া কেটে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি খাইতে চাইলে প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করেছে জান্তা সেনারা।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে মিয়ানমার সেনাদের অভিযানে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গ্রামটিতে প্রায় ৩ দিন ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। সৈন্যরা বাসিন্দাদের চোখ বেঁধে মারধর করেছে, তাদের দেহে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং তাদের কাউকে প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করেছে।
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলায় ১৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী ৫১ জন গ্রামবাসী এই সহিংস নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তবে আরাকান আর্মির মতে, নিহতের সংখ্যা ৭০-এর বেশি। তবে ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিল বা জান্তা সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গ্রামটির এক নারী জানিয়েছেন, ‘জান্তা সেনারা গ্রামের পুরুষদের জিজ্ঞেস করছিল যে, গ্রামে আরাকান আর্মি আছে কিনা। তাদের কেউ বলেছিলেন হ্যা, কেউ না আবার কেউ বলেছিলেন জানিনা। এরপরেও সেনারা তাদের আক্রমণ করে। তিনি বলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমার স্বামীকে একটি সামরিক গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার ছেলেকে আমাদের দুজনের কাছ থেকে আলাদা করা হয়েছে। আমি জানি না সে কোথায় আছে। আমি জানি না আমার ছেলে ও স্বামী বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গ্রামটিতে প্রায় ১ হাজার পরিবারের থাকত। অভিযানে তাদের সবাইকে দু’দিন খোলা জায়গায় সূর্যের নীচে রাখা হয়েছিল, খাবার বা পান দেয়া হয়নি তাদের। বেশ কয়েকজন পুরুষকে চোখ বেঁধে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকেই এখনো ফিরে আসেনি। ওই নারী জানিয়েছেন, তারা খুবই তৃষ্ণার্ত ছিল। তারা সারাদিন রোদে দাঁড়িয়ে পানি ভিক্ষা চাইত। কিন্তু সৈন্যরা পানির বোতলে প্রস্রাব করে তা পুরুষদের হাতে দেয়।
তিনি বলেছেন, তিনি প্রচুর গুলির শব্দ শুনেছেন, কিন্তু কাকে গুলি করা হয়েছে তা দেখতে পাননি কারণ সবাইকে মাথা নিচু করে রাখতে হয়েছিল। তিনি বলেন, আমি তাকানোর সাহস করিনি। তারা আমার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে ডাকল। তারপর আমি গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। সে আর ফিরে আসেনি। গ্রামবাসীরা বলেছেন, তারা শুনতে পেয়েছেন যে, সৈন্যরা মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য বেলচা চাচ্ছে।