রমজানের শেষ মুহূর্তগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ

রমজানের শেষ মুহূর্তগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ

জহির উদ্দিন বাবর

পবিত্র রমজান মাসের শেষ পর্যায়ে আমরা উপনীত। আর দুই তিনটি রোজা রাখলেই এবারের মতো বিদায় নেবে রমজান। সংযম- অনুশীলনের মাস এই রমজানের শেষ মুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ের চর্চা ও অনুশীলনের ওপর নির্ভর করে পুরো রমজানের ফলাফল। রমজান মুমিনের জন্য পরীক্ষার মতোই। পরীক্ষার্থী যেমন শেষ মুহূর্তটি যথাযথ কাজে লাগানোর ব্যাপারে আন্তরিক থাকে মুমিনেরও তাই হওয়া উচিত। সম্ভাবনার যে হাতছানি নিয়ে রমজান এসেছিল তা আমরা কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছি সে সম্পর্কে নিজেরাই বেশি অবগত। হিসাব কষে দেখা দরকার, আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে এখনও কতটুকু ফারাক রয়ে গেছে।

হাতে থাকা সময়টুকু যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে এই ফারাক কমিয়ে আনা সম্ভব। কারণ রমজানের প্রতিদান সম্পর্কে কোরআন- হাদিসে যে ঘোষণা রয়েছে তা নির্ধারণ হয় শেষ দশকের শেষ দুই চার দিনে। ২৯ রমজানের রাতটিও শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে ওই রাতে ইবাদত- বন্দেগী করে রমজানের পুরো ফজিলত আমরা লাভ করতে পারি। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রোজাদারের সারা মাসের প্রতিদান দেওয়া হয় রমজানের সর্বশেষ রাতে। সুতরাং এ গুরুত্বপূর্ণ সময়টি আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণ করে ইবাদত- বন্দেগিতে কাটাতে পারলে ভালো ফলাফলের আশা করা যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যারা রমজান পেল কিন্তু তাদের গোনাহ ক্ষমা করাতে পারল না তারা হতভাগা। আমরা কেউই চাই না নিজেদের নামটি হতভাগাদের তালিকায় যুক্ত হোক। সারা মাস সেদিকে তেমন মনোযোগ না দিলেও এখন সময় এসেছে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার। সংযমের যে শিক্ষা নিয়ে রমজান এসেছিল, এ কয়েক দিনের অসংযমতায় যেন তা নষ্ট না হয়ে যায়। অনেকেই ঈদ- প্রস্তুতিতে অসংযম হয়ে উঠি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট হয় এমন আচরণও করি। এটা রমজানের প্রাপ্তিকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করে।

রমজানকে ‘সহানুভূতির মাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শেষের দিনগুলোতে দান- সদকার হাতকে প্রসারিত করে এ গুণটি অর্জন করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। গরীব- দুঃখী- অসহায়দের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিলে আল্লাহতায়ালার দয়া ও অনুগ্রহ নিশ্চিত হয়।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা আমার সৃষ্টির প্রতি দয়া করে আমি তাদের প্রতি দয়াশীল হই। সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়ার্দ্র হওয়ার উপযুক্ত সময় রমজান। এ গুণটি কোনও মুমিনের মধ্যে এসে গেলে তিনি সফল। মানবতার প্রতি কোমল ও সদাচার হওয়ার অনেক উপলক্ষ রয়েছে রমজানে। যারা এ উপলক্ষগুলো যথাযথ কাজে লাগাতে পারবেন তারাই রমজানের পুরো ফজিলত লাভের আশা করতে পারেন।

রহমত, মাগফেরাত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে রমজান এসেছিল। জীবনের জন্য অনিবার্য এই বিষয়গুলো আমরা কতটা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি তা নিজেরাই ভালো জানি। রমজানের পুরোপুরি হক আদায় করে রোজা আমরা কেউই রাখতে পারিনি। আমাদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও রোজায় কিছু ত্রুটি- বিচ্যুতি হয়েই গেছে। সেই ত্রুটিগুলো শুধরানোর উপযুক্ত সময় এটাই। শেষ মুহূর্তগুলো কাজে লাগাতে পারলে আশা করা যায় রমজানের পুরোপুরি প্রাপ্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারবো।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

Scroll to Top