রমজানের আমল কতখানি অর্জিত হল?

রমজানের আমল কতখানি অর্জিত হল?

জহির উদ্দিন বাবর

পবিত্র রমজান মাস আস্তে আস্তে বিদায় হয়ে যাচ্ছে। মুমিনের অপার সম্ভাবনার এই মাস পাওয়া অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। যারা এ মাস পেয়েছে এবং তা কাজে লাগাতে পেরেছে তারাই সফল। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। এই মাসে যত বেশি ইবাদত করা যায় ততই ভালো।

মূলত একজন রোজাদারের প্রতিটি মুহূর্তই ইবাদতে গণ্য হয়। রোজা অবস্থায় অন্য ইবাদত করলে বাড়তি সওয়াব হিসেবে তা যুক্ত হবে। যেহেতু এ মাসের প্রতিটি ইবাদতে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়ার কথা হাদিসে উল্লেখ আছে এজন্য প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে লাগানো উচিত।

রমজানে ইবাদতের পাশাপাশি তওবার গুরুত্ব অনেক বেশি। এ মাসের তওবা সহজেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। রমজান আমাদের জীবনে যে শুদ্ধতার ও শুভ্রতার আবহ নিয়ে এসেছে, তাতে তওবা করে জীবনকে আলোকিত করার সুযোগ সবার গ্রহণ করা উচিত। রমজানে তওবা করে তার ওপরটিকে থাকা যত সহজ তা আর কখনও সম্ভব না। রমজানে চলতে- ফিরতে সংঘটিত নানা ধরনের পাপের জন্য আল্লাহর কাছে আমরা দিন শেষে অথবা গোনাহ হয়ে যাওয়া মাত্রই ইস্তেগফার করতে পারি। মুমিনের জীবনে অত্যন্ত সৌভাগ্যপূর্ণ নেয়ামত হচ্ছে আন্তরিক ইস্তেগফারের সুঅভ্যাস। রমজানে এ আমলটি আমরা শুরু করতে পারি।

বান্দা যখন তার নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তার কাছে মাগফেরাত তলব করে- এটা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে দোয়া কীভাবে করতে হবে এর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বান্দার আহ্বানে সাড়া দেবেন বলে কোরআনে ওয়াদা করেছেন ‘হে বান্দারা! তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে ডাকলে আল্লাহ বান্দার ডাকে বেশি সাড়া দেন বলেও হাদিসে উল্লেখ আছে।

রমজানে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। অনেকগুলো মুহূর্ত আছে যখন দোয়া করলে তা কবুলের নিশ্চয়তা অনেক বেশি। যেমন ইফতারের সময় দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার অনেকটা গ্যারান্টি আছে। তারাবি, তাহাজ্জুদ, সেহেরি সবসময়ই দোয়া কবুলের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কেউ যখন রোজা অবস্থায় আল্লাহর দরবারে হাত তুলেন তখন আল্লাহর রহমত তার দিকে ধাবিত হয়। তার মনের আকুতি আল্লাহর কাছে সহজেই গ্রহণ হয়।

রমজানে চারটি আমল বেশি বেশি করার কথা হাদিসে উল্লেখ আছে।

প্রথম কাজটি হলো বেশি বেশি কালেমা পাঠ করা। বিশেষ করে কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করা। কালেমায় আল্লাহর একত্ববাদের কথা রয়েছে, তার পবিত্রতা বর্ণনা করা হয়েছে। যখন কালেমা পাঠ করেন তখন আল্লাহ তার প্রতি মনোযোগী হন।

দ্বিতীয় আমল হলো বেশি বেশি ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। আমি অপরাধী, কৃত অপরাধের ক্ষমা চাচ্ছি এই আকুতি জানানো।

তৃতীয় আমলটি হচ্ছে জান্নাত লাভের আশা করা। কখনও নিরাশ না হওয়া। আমি যত অপরাধীই হই আল্লাহ আমাকে ইচ্ছে করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন সেই বিশ্বাস রাখা।

চতুর্থ আমলটি হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য প্রার্থনা করা। আমরা আমাদের অপরাধের কারণে আল্লাহর দরবারে ধরা পড়ে গেলে কোনও উপায় নেই। এ জন্য আল্লাহ মহান দরবারে যেন আমি ধরা না খাই সেই আকুতি রমজানে বেশি বেশি জানাতে হবে। এই চারটি কাজ বেশি বেশি করলে আশা করা যায় রমজানের সুফল আমরা পুরোপুরি লাভ করতে পারব।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

Scroll to Top