গত দুই দশকে আমেরিকার গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ একাধিক মহাকাশযান পাঠিয়েছে মঙ্গলগ্রহে। ২০২১ সাল থেকে মঙ্গলে রয়েছে চীনা মহাকাশযান তিয়ানওয়েনও। কারণ একটাই, পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনও গ্রহে মানুষের বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করা যায় কিনা, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
একই সঙ্গে অন্য কোনও গ্রহে জীবনের খোঁজ পাওয়া যায় কি না, তা নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছে মহাকাশ সংস্থাগুলি। মঙ্গলগ্রহ নিয়ে লাগাতার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার শিল্পপতি ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘স্পেস এক্স’।
বহু বছর ধরেই মঙ্গল গ্রহে বসতি তৈরির স্বপ্ন দেখছে তার সংস্থা। ২০১৫ সালে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন মাস্ক। তার প্রস্তাব ছিল, একাধিক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানো হোক মঙ্গলে।
২০১৫ সালে একটি টেলিভিশন শো-তে এসে এই দাবি করেন ইলন। কিন্তু কেন মঙ্গলগ্রহে পরমাণু হামলা চালাতে চান ইলন? মঙ্গলের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। দেখতে লাল হলেও সেই গ্রহের তাপমাত্রা বেশ কম। সূর্য থেকে দূরত্বের কারণেই কম থাকে সেই গ্রহের তাপমাত্রা।
যদিও ইলনের দাবি, মঙ্গলে যদি একাধিক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তা হলে সেই গ্রহের তাপমাত্রা অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। আর এর ফলে মঙ্গলকে দ্রুত বাসযোগ্য গ্রহে রূপান্তরিত করা যাবে বলেও তার দাবি।
সেই দাবি তোলার পর ২০১৯ সালে মঙ্গলে পরমাণু বিস্ফোরণের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে টুইটারে (বর্তমানে এক্স) পোস্ট করেন ইলন। সেই টুইটে বিজ্ঞানীমহলে আলোড়ন তৈরি হয়। অনেকে ইলনের সমালোচনাও করেন।
২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট সেই পোস্টে ইলন লেখেন, ‘মঙ্গলে পরমাণু বিস্ফোরণ বলতে সেখানের বায়ুমণ্ডলে একটি কৃত্রিম সূর্য তৈরি করা। অনেকটা আমাদের সূর্যের মতোই তাপ দেবে সেই কৃত্রিম গ্রহ। তবে এর কারণে মঙ্গল খুব বেশি তেজস্ক্রিয় হয়ে উঠবে না।’
ইলনের যুক্তি, পরমাণু বিস্ফোরণের কারণে মঙ্গলের বরফের চাদর বাষ্পীভূত হয়ে জলীয় বাষ্প, কার্বন মনোক্সাইড এবং গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করবে। যা সেই গ্রহকে উষ্ণ করবে। ফলে মানুষ বসবাস করতে পারবে সেই গ্রহে।
‘ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস’ অনুযায়ী, মঙ্গলে গড় তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। সেই হিমশীতল তাপমাত্রায় মঙ্গলের জল কেবল বরফ বা বাষ্প হিসাবে উপস্থিত।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, ৪০০ কোটি বছর আগে মঙ্গল গ্রহের জলবায়ু এবং পরিবেশ এ রকম ছিল না। সেই গ্রহে নদী দিয়ে বয়ে যেত টলটলে পানি। আকাশ ছিল নীল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বছরের পর বছর ধরে মঙ্গলের চেহারা পাল্টেছে।
কিন্তু সত্যিই কি মঙ্গল গ্রহে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটালে মাস্কের পরিকল্পনা সফল হবে? বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহলের একাংশ। তাদের দাবি, মাস্কের পরিকল্পনামাফিক চললে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিস্ফোরণের ফলে ধূলিকণায় ঢেকে যেতে পারে আকাশ। যা সূর্য থেকে আগত তাপকে বাধা দিয়ে আরও শীতল করে তুলতে পারে মঙ্গলগ্রহকে।
বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, কখনওই জোর করে মঙ্গল গ্রহকে পৃথিবীর মতো গ্রহে রূপান্তরিত করা যেতে পারে না। নাসার অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী জিম গ্রিনের মতে, মঙ্গলগ্রহ নিজে থেকেই নিজেকে বদলে ফেলবে। চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে প্রাকৃতিকভাবেই তা হবে বলে জানিয়েছেন জিম।
শুধু ইলন না, মঙ্গলকে বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন ‘টেরাফর্ম ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ক্যাসি হ্যান্ডমারও। তার দাবি, ছোট ছোট বহু সৌরকোষ মঙ্গলে পাঠানো হলে সেগুলি দিনের বেলায় সূর্য থেকে তাপ নিয়ে রাতের দিকে তা প্রতিফলিত করবে। ফলে গ্রহের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সেই দাবিও বিজ্ঞানীদের মধ্যে সেভাবে জনপ্রিয় হয়নি।