অন্তর্বাস না পরায় নারীকে প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ

অন্তর্বাস না পরায় নারীকে প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ

সুদানে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর দুই গ্রুপের যুদ্ধের এক বছর পর তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে দেশটি। খাদ্যের অভাবে ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে শিশুরা, দেশটিতে অসুস্থ মানুষেরা অর্থ খরচ করে ওষুধ না কিনে সেই অর্থ দিয়ে খাবার কিনে খাচ্ছেন। এমতাবস্থায় দেশটিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান “হেমেদতি” দাগালোর দ্বন্দ্বের জেরে প্রকাশে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুই গ্রুপ।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিতে কৃষি উৎপাদন অনেক কমে যায়। গেল এক বছরে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য খাদ্যের দাম বেড়েছে এবং পর্যাপ্ত খাবারও পাওয়া যাচ্ছে না।

সারাদেশে বেসামরিক মানুষদের সাহায্য করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুম’র (ইআরআর) মুখপাত্র মুখতার আতিফ বলেছেন, যুদ্ধে বেসামরিকরা নীরবে মারা যাচ্ছেন।

আতিফের নেটওয়ার্ক সংগঠনটি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের তিনটি শহরের খার্তুম উত্তরের ৭০টি সম্প্রদায়ের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষকে খাবারসরবরাহ করে।

ইআরআর সুদান জুড়ে হাজার হাজার মানুষের ভরসাস্থল হয়ে ওঠেছে। কিন্তু মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছনো তাদের জন্য সীমিত করা হয়ে থাকে। সংগঠনটি অনুদানের উপর নির্ভর করে তাদের কর্যক্রম চালায়, যার বেশিরভাগই আসে মোবাইল ব্যাঙ্কিং অ্যাপের মাধ্যমে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে যোগাযোগ বিভ্রাট শুরু হওয়ার এটি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

এ সংগঠনের সহায়তা ছাড়া শত শত রান্নাঘরে আগুন জলে না। প্রতিদিন সাহায্যের জন্য দীর্ঘ সারি দেখা যায়।মানুষেরা জ্বালানীর জন্য পাত্র হাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে।

যদিও যুদ্ধটির বেশিরভাগই খার্তুমকে কেন্দ্র করে চলছে। যুদ্ধ শুরুর পর এ অঞ্চলের মানুষেরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধের ফলে খাদ্য ও ত্রাণবাহী যানবাহনের নিয়মিত চলাচলকে মারাত্মকভাবে সীমিত করা হয়েছে এবং সুদানে ক্ষুধার সংকট আরও গভীর হয়েছে।

জাতিসংঘ অনুমান করেছে, প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন যা সুদানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। সংঘাতে ৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

জাতিসংঘের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, যুদ্ধরত উভয় পক্ষই খাদ্য সহায়তায় বাধা সৃষ্টি করছে। তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় খাবার পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

সুদানে সহায়তার খাবারের জন্য অপেক্ষা 


সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সুদানের এক পোর্ট দিয়ে আধাসামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার বেসামরিক মানুষদের জন্য পাঠানো সহায়তা বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। আল জাজিরার সূত্র বলছে, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পাঁচটি ভিন্ন স্ট্যাম্পের প্রয়োজন। এতে কয়েক দিন থেকে সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে। গত জানুয়ারি মাসে ৭০টিরও বেশি ট্রাক ছাড়পত্রের জন্য দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এ বন্দরে অপেক্ষায় ছিল।

আধাসামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দেয় কিনা জানতে চাইলে আল জাজিরাকে কোনো উত্তর দেয়নি সেনাবাহিনী।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, অক্টোবর থেকে উত্তর কর্ডোফান রাজ্যে ৭০টিরও বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। একটি এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে তবে আরএসএফ দ্বারা বেষ্টিত। এ এলাকায় সহায়তার ট্রাক নিরাপদে যেতে হলে ট্যাক্স দিয়ে যেতে হয়। তা অর্থ, পণ্য বা জ্বালানিই হোক না কেন।

আরএসএফের মুখপাত্র আবদেল রহমান আল-জালি ত্রাণবাহী গাড়ি থেকে অর্থ নিয়ে লাভবান হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে লিখিত প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।

প্রায় দুই মাস মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের কারণে খাদ্য সংকট আরও জটিল হয়েছে। এ সময় মানুষের বিদেশে থাকা আত্মীয়দের পাঠানো রেমিট্যান্সও সংগ্রহ করতে পারেনি তারা। মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তারা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করার জন্য ব্যবহার করে।

গত তিন সপ্তাহে ধরে এলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট যোগাযোগ পরিষেবা সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে। কিন্তু ঐ এলাকায় এটি একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কিছু এলাকায় মানুষকে ১০ মিনিটের জন্য সংযোগ পেতে হগলে ৪ হাজার সুদানিজ পাউন্ড ( ৬.৬ ডলার) পর্যন্ত দিতে হবে।

ডাব্লুএফপি কর্মকর্তা এবং কর্মীরা জানিয়েছেন, পিতামাতারা তাদের সন্তানদের কম খাবার খাওয়াচ্ছেন। তাদের শেষ সম্বল বিক্রি করছেন, অর্থের জন্য ভিক্ষা করছেন বা ওষুধ থেকে খাবারের জন্য অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন।

সুদানিজ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফিকরার নীতি ও ওকালতিতে কর্মরত একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার ডালিয়া আবদেলমোনিয়েম জানিয়েছেন, পরিবারের নিরাপত্তা এবং খাবারের নিশ্চয়তা পাবার জন্য মহিলারা যৌন বিনিময় এবং আরএসএয় যোদ্ধাদের উপপত্নী হতে বাধ্য হচ্ছেন।

সুদানে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীদের সাথে কাজ করা একজন কর্মী বলেছেন, এখানে বেঁচে থাকার জন্য যৌনতা একটি “সাধারণ প্রবণতা” হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।

গত ১৬ মার্চ একটি ল্যানসেট রিপোর্টে বলা হয়, ক্ষুধার সংকটের সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার পতন হয়েছে। রাজধানী খার্তুমের একমাত্র অবশিষ্ট শিশু স্বাস্থ্য সুবিধা বেষ্টিত আল-বালুক হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে দুই বা তিনটি শিশু ক্ষুধায় মারা যায়।

যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, আগামী মাসে ক্ষুধার কারণে ২ লাখ ৩০ হাজার শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং নতুন মা মারা যেতে পারে।

ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) গত সপ্তাহে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৩ সালে সুদানের শস্য উৎপাদন প্রায় অর্ধেক হয়। সবচেয়ে বেশি খাদ্য শস্য উৎপাদন কমে যেখানে সংঘাত সবচেয়ে তীব্র ছিল। এফএও জানায়, বৃহত্তর কর্ডোফান রাজ্য এবং দারফুরের অঞ্চলগুলিতে গড়ে ৮০ শতাংশ উৎপাদন কম হয়।

Scroll to Top