জহির উদ্দিন বাবর
রমজানের অন্যতম আমল সেহেরি। এর মাধ্যমে রোজা শুরু হয়। রোজার নিয়তে সেহেরি খাওয়া সুন্নত। রাসুল সা. বলেছেন, ‘সেহেরি খাও, তাতে বরকত আছে।’ পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, সামান্য খেলেও সেহেরির সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। সেহেরি না খেয়ে রোজা রাখতে ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
অন্য ধর্মেও রোজার বিধান পাওয়া যায়। ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মেও রোজা ছিল। তবে তাদের রোজায় সেহেরির কোনও নিয়ম ছিল না। সনাতনী ধর্মে রোজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানেও সেহেরির কোনও নিয়ম নেই। এমনকি ইসলামের প্রথম যুগেও সেহেরি ছাড়াই রোজা রাখা হতো। পরবর্তী সময়ে রাসুল সা. সেহেরি খাওয়ার বিধান নির্ধারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের (ইহুদি- খ্রিস্টান) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহেরি খাওয়া।’
পশ্চিম আকাশে সাদা আভা ছড়িয়ে পড়াকে বলে সুবহে সাদিক। সেই সুবহে সাদিকের আগেই সেহেরি খেতে হয়। এরপর কিছু খেলে রোজা হবে না। কেউ যদি সেহেরির সময় আছে মনে করে খেয়ে ফেলে আর বাস্তবে সময় না থাকে তাহলে তাকে রোজা কাজা করতে হবে।
রাসুল সা. গুরুত্ব দিয়ে সেহেরি খেতেন। তার দীর্ঘ সময়ের খাদেম আনাস রা. একদিনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. সেহেরির সময় আমাকে ডেকে বললেন, হে আনাস! আমি রোজা রাখার ইচ্ছা করেছি, আমার সামনে কিছু খাবার পরিবেশন কর। আমি তার সামনে শুকনো খেজুরের একটি পাত্র এবং পানি পরিবেশন করলাম। এরপর তিনি হজরত বেলাল রা.- এর সঙ্গে (তাহাজ্জুদের) আজানের পর সেহেরি গ্রহণ করলেন।
আরেক হাদিসে আছে, রাসুল সা. বলেন, সেহেরি একটি বরকতময় খাবার। তাই তোমরা কখনও একে বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সেহেরি খেয়ে নাও। কেননা স্বয়ং আল্লাহতায়ালা এবং তার ফেরেশতারা সেহেরি গ্রহণকারীদের প্রতি রহমত নাজিল করেন।
অনেকে আরামের ঘুম বাদ দিয়ে সেহেরি খেতে অলসতা বোধ করেন। এ জন্য কেউ কেউ সেহেরি না খেয়েই রোজা রাখেন। তাদের রোজা যদিও হয়ে যাবে তবুও আল্লাহর রাসুলের একটি সুন্নতের লঙ্ঘন হওয়ার কারণে পুরোপুরি সওয়াব থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন। এ জন্য একটু কষ্ট করে হলেও সেহেরি গ্রহণ করা উচিত। কারও খাওয়ার চাহিদা না থাকলে অন্তত একটু পানি বা অন্য কোনও খাবার হলেও সেহেরির নিয়তে খেয়ে নেবেন। এতেও সেহেরির সওয়াব পাওয়া যাবে। আবার অনেকে সেহেরিতে অনেক বেশি পরিমাণে খান। এটাও উচিত নয়। কারণ বেশি খেলে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। তাছাড়া এটা রোজার সংযম পরিপন্থি।
সেহেরির সময়টি আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের বিশেষ সময়। এ সময়ের ইবাদত- বন্দেগি আল্লাহর কাছে কবুল হয় বেশি। সম্ভব হলে সেহেরির সময় কয়েক রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নেওয়ার কথা হাদিসে আছে। সেহেরি খাওয়ার আগে- পরে সময়টুকু ইবাদতে কাটানো উচিত। অনেকে এই সময়টুকু গল্প- গুজব করে কাটান। কেউ কেউ মোবাইলটিপে বাটিভি দেখে কাটান। এই সময়ে নফল নামাজ, তাসবিহ- তাহলিল কিংবা কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। সময়মতো সেহেরি খেলে ফজরের নামাজ কাজা হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না। একজন রোজাদারের জন্য নামাজের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া অনেক বেশি জরুরি। কোনও ক্রমেই রোজাদারের ফজরের নামাজ কাজা করা সমীচীন নয়। অনেকে আবার আগে আগে সেহেরি খেয়ে শুইয়ে পড়েন। এতে তার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যায়। এটাও শরিয়তের দৃষ্টিতে অপরাধ।
শেষ সময়ে সেহেরি খাওয়া সুন্নত। আমাদের দেশে রমজানের যে ক্যালেন্ডার বের হয় সেটা অনুসরণ করলেই শেষ সময়ে সেহেরির সুন্নত পালন করা সম্ভব। আবার শেষ মুহূর্তে সেহেরি খেতে গিয়ে এত বিলম্ব করা যাবে না যে, ফজরের সময় শুরু হয়ে যায়। এজন্য শেষ সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকা কাম্য। প্রয়োজনে শেষ সময়ের কয়েক মিনিট আগেই খাওয়া- দাওয়া বন্ধ করা উচিত।
সারাবাংলা/এসবিডিই